জাতীয়

শাহজালালে প্রবাসীকে মারধর, রক্তাক্ত হয়েও গুনতে হলো জরিমানা

বায়ান্ন প্রতিবেদন

বিমানবন্দর! প্রবাসীদের স্বপ্নপূরণের প্রথম ও শেষ ঠিকানা। কিন্তু সেই বিমানবন্দরেই কি না একজন প্রবাসীকে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে। চমকে যাওয়ার মতো আরও এক বিষয় হলো—বিনা অপরাধে মাথা ফাটিয়ে, রক্ত ঝরিয়ে তাকে উল্টো জরিমানাও গুণতে হলো।

বুধবার (০৮ জানুয়ারি) গভীর রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটনাটি ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনকে মোবাইল কোর্টে হাজির করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগ—তিনি সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিয়েছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। ১৯৮০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ১৮৯ ধারা অনুযায়ী, এটি গুরুতর অপরাধ। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তার কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

কিন্তু পুরো ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সামনে আসে এক অন্য চিত্র।

বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের ২ নম্বর ক্যানোপি গেট দিয়ে বের হন। গেট সংলগ্ন স্থানে এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই কর্মীর দাবি, সাঈদ তাকে ধাক্কা দিয়েছেন। তবে প্রবাসীর বক্তব্য ছিল বিপরীত—"ভাইয়া, আমি (ধাক্কা) দিইনি।" এরপরই সেখানে থাকা ৭-৮ জন নিরাপত্তাকর্মী মিলে তাকে কনকর্স হলে নিয়ে গিয়ে মারধর শুরু করেন। এতে তার মাথা-মুখ ফেটে রক্তাক্ত হয়। পরে সেখান থেকে সাঈদ বেরিয়ে এলে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এভসেক সদস্যরা তাকেসহ তার আত্মীয়স্বজন সবাইকে আবারও ভেতরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।

এদিকে বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চেপে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মারপিটের শিকার যাত্রীর রক্তমাখা শরীর ও কিছু কথা-কাটাকাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।  ভিডিওতে মারপিটের শিকার ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আপনারা পাঁচ-ছয় জন ধরে আমাকে মারছেন।’ আর পাশে থাকা এভসেক সদস্য বলছেন, ‘আমাকে ধাক্কা দিলেন। আমি কি সাধারণ মানুষ? আমার ইউনিফর্ম আছে।’ তবে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আহত ব্যক্তি বলছেন, ‘আমার কথা শোনেন ভাইয়া, আমি (ধাক্কা) দিইনি।’

ভিডিও দেখার পর এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। একজন প্রবাসী, যিনি বিদেশে খেটে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন, তার সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না বলে দাবি অনেকের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম লিখিত আকারে তার বক্তব্য পাঠান। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আহত যাত্রীর নাম উল্লেখ না করেই বলেন, রাত সোয়া ৯টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনী ক্যানোপি-২-এর সামনে দুজন যাত্রীর কর্তৃক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, পাঁচজন আগমনী যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে ক্যনোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ গেটের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করলে সব আগমনী যাত্রীর জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওই সময় ওই এলাকায় সম্মানিত আগমনী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মী বিনীতভাবে উক্ত যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষণ পরে উক্ত নিরাপত্তা কর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি রাগন্বিত হয়ে পড়েন এবং অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় উক্ত নিরাপত্তা কর্মীকে গালাগাল করতে থাকেন। এ সময় সেখানে নিয়োজিত আরও একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে ওই যাত্রীর ছেলে (একই ফ্লাইটের যাত্রী, যিনি পেছনে অবস্থান করছিলেন) ঘটনাস্থলে এসে বিমানবাহিনীর ওই নিরাপত্তা কর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিলঘুষি মারা শুরু করলে তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তা কর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে নিয়োজিত আনসার এবং অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে এলে ওই নিরাপত্তাকর্মীদের উল্লেখিত দুজন যাত্রীর হাত থেকে মুক্ত করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীরা দীর্ঘ যাত্রার পর বিমানবন্দরে নেমেই আত্মীয়স্বজনদের কাছে যেতে ব্যস্ত হয়ে থাকেন। তাড়াহুড়ায় অনেক সময় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেন তারা। কিন্তু একজন কর্মকর্তা সেগুলো আমলে না নিয়ে তাকে সুন্দরভাবে বের করে দেয়াটাই মুনশিয়ানা।

প্রবাসীর মারধরের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন প্রবাসীর জন্য দেশে ফিরে বিমানবন্দরে মারপিটের শিকার হওয়ার চেয়ে বড় লজ্জা ও অপমান আর কী হতে পারে! শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রবাসী | জরিমানা | বিমানবন্দর