বহুল আলোচিত আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক ই ইনসাফ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। একই মামলায় তার স্ত্রী বুশরা বিবিকেও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে পরিচালিত একটি জবাবদিহি আদালত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) এ রায় ঘোষণা করেন। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি ইমরান খানকে ১০ লাখ রুপী ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে পাঁচ লাখ রুপী জরিমানা করেছেন ওই আদালত। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে ইমরান খানকে আরও ছয় মাসের জেল এবং বুশরা বিবিকে তিন মাসের জেল ভোগ করতে হবে।
আদালতের বিচারক নাসির জাভেদ রানা রায় ঘোষণার পর বলেন, ‘পুলিশ প্রমাণ করেছে ইমরান খানই দোষী।’ তবে তোষাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে জেলবন্দি থাকা ইমরান খান এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।
শুক্রবার সাজা ঘোষণার পর এক এক্স বার্তায় ইমরান খান বলেন, ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। এমন একটি মামলায় আমার নাম জড়ানো হচ্ছে যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে কোনওদিন একটা টাকাও নিইনি। এক টাকারও ক্ষতি হয়নি সরকারের। মেফেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট মামলার তো একাধিক অভিযোগ রয়েছে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে। তোষাখানা থেকে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি বের করা হয়েছিল। তবে সব মামলাই ওপেন অ্যান্ড শাট। অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি করা হয়েছে। নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ৯০ কোটি রুপী দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’
আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় তাঁর স্ত্রী কোনওভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করে ইমরান খান আরও বলেন বলেন, ‘আমার উপর চাপ তৈরি করতেই ওঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এর আগেও বুশরাকে ন’মাস পর্যন্ত জেলবন্দি করে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানি নাগরিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যারা এমনটা করছে তারা নিজেরাই হাসির খোরাকে পরিণত হচ্ছে। এমনটা হতে থাকলে রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা ফিরবে না এ দেশে।’
দুই বছর আগে, মামলাতেই জামিন নিতে গিয়ে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রতিষ্ঠাতা। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি উমর আটা বন্দিয়াল ২০২৩ সালের মে মাসে আদালত চত্বর থেকে ইমরানের সেই গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলে উল্লেখ করেছিলেন। লাহোর হাইকোর্ট পরে ইমরানের জামিনের আর্জিও মঞ্জুর করেছিল এই মামলায়। তবে রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত পিটিআই প্রধানের কারামুক্তি হয়নি।
আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা কী?
একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছিলেন আল কাদির ট্রাস্ট। তখন ওই ট্রাস্ট থেকে বেআইনিভাবে বিপুল পরিমাণ পাকিস্তানি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ইমরান খানের বিরুদ্ধে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয় বুশরা বিবির বিরুদ্ধেও। পাকিস্তানের তদন্তকারী সংস্থা (ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো) এই মামলার তদন্ত করে। ২০২৩ সালের ১ মে ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তার পরই আধাসেনা রেঞ্জার্স বাহিনী তাঁকে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার(১৭ জানুয়ারি) সেই মামলাতেই সস্ত্রীক ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করে পাকিস্তানের আদালত।
প্রসঙ্গত, তোষাখানা মামলায় ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইমরান খান। পরে প্রথমে তাঁকে ঠাঁই প্রদেশের অটোক করাগারে রাখা হয়। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে।
ওই কারাগারে ইমরানের প্রাণনাশের আশঙ্কা করেছেন তাঁর পরিবার ও সমর্থকরা। ইমরান খানও ওইসময় অভিযোগ করেছিলেন, জেলে তাঁর সঙ্গে ‘জঙ্গি’দের মতো আচরণ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের যে সেলে রাখা হয় সেরকমই এক কুঠুরিতে রাখা হয়েছে তাঁকে। একই অভিযোগ করেছিলেন তাঁর সাবেক স্ত্রী জেমিমা খানও। তাঁর আরও অভিযোগ, কেবল ইমরান নয়, তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও হেনস্তা করা হচ্ছে।
এমআর//