পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় এক কলেজ প্রভাষককে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। বিএনপি নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই নেতার খাম বিনিময়ের পুরোনো একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করার জেরে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইস বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, মারধরের পর ওই প্রভাষককে স্থানীয় বাজারে জড়ো হওয়া শতাধিক মানুষের সামনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিয়েছে অভিযুক্তরা।
মারধরে আহত মো. রিয়াজ আহম্মেদ চরমোন্তাজ আব্দুল ছাত্তার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) গলাচিপা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলামসহ ১১ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমারৎ হোসেন বলেন, প্রভাষককে মারধরের ঘটনা সত্যতা আছে। এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলার কাগজ আসলে আমরা এফআইআর (FIR) করবো।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলায় অংশ নেয় ৩০-৩৫ জনের একটি দল, যাদের সবাই রাঙ্গাবালী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চরমোন্তাজ ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলামের অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে এগিয়ে আসতে সাহস করেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে নজরুল ইসলাম নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে রাঙ্গাবালী উপজেলায় আলোচনার শীর্ষে আছেন। গত ১৫ জানুয়ারি ফেসবুকে একটি পুরোনো ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে নজরুল ইসলামকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার সঙ্গে খাম বিনিময় করতে দেখা যায়। এ ছবি শেয়ার করার পর থেকেই তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। এছাড়াও (৯ জানুয়ারি) চরমোন্তাজ আব্দুল ছাত্তার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রকাশিত এডহক কমিটিতে সভাপতি পদে পছন্দের প্রার্থী মনোনীত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নজরুল ইসলাম। এর পরদিন তিনি কিছু নেতাকর্মী ও ব্যক্তিগত অনুসারীদের নিয়ে কলেজ গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। যার প্রতিবাদে কলেজের অধ্যক্ষ সংবাদ সম্মেলন করেন।
চরমোন্তাজ আব্দুল ছাত্তার স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি এডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মুন্সীর পছন্দের প্রার্থী কলেজের সভাপতি নির্বাচিত না হওয়ায় তিনি সামাজিক মাধ্যমসহ প্রকাশ্যে হুমকিসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে। সেই রেশ ধরে আমার ভাই প্রভাষক মো. রিয়াজ স্লুইস বাজারে যাওয়ার পরে সন্ত্রাসী স্টাইলে তুলে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ১১ জনের নামে মামলা করেছি।
চরমোন্তাজ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম মুন্সী বলেন, যতটুক শুনেছি মারধর করা হয়নি, জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তুমি এ ধরনের স্ট্যাটাস কেন দিয়েছো। সে বলছে আমার অন্যায় হয়েছে, আমি আর দিবো না।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো.মুনিম আহম্মেদ বলেন, তার কর্মকাণ্ড বিষয়ের উপজেলা বিএনপির সকল সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অবগত। দলের হাইকমান্ডকে এসব বিষয়ে জানানো হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় হাইকমান্ড যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এম এইচ//