ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল আলোচিত ‘হাইভোল্টেজ’ ফোনালাপটি শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত আটটায় শুরু হয়ে বিশ্বের শীর্ষ এই দুই নেতার দেড় ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ চলে।এসময় জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ফোনালাপ নিয়ে যা বলেছে ক্রেমলিন:
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফোনালাপ শেষে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়। ক্রেমলিনের বিবৃতিতে জানানো হয়, জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়া ও ইউক্রেন আগামী ৩০ দিন হামলা বন্ধ রাখবে—এমন প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ক্রেমলিনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পুতিন তাৎক্ষণিকভাবে রুশ সামরিক বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট আদেশ দিয়েছেন।
এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরে নিরাপদে চলাচল করার প্রস্তাবে রুশ প্রেসিডেন্ট গঠনমূলকভাবে সাড়া দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে মস্কো।
যেসব সিদ্ধান্ত হলো:
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলা হয়েছে, ১৯ মার্চ (আজ) রাশিয়া ও ইউক্রেন ১৭৫ বন্দী বিনিময় করবে। এ ছাড়া রাশিয়ার পক্ষ থেকে ১৩ জন মারাত্মক আহত ইউক্রেনীয় সেনাকে হস্তান্তর করা হবে।
পুতিন আরও বলেছেন, সংঘাতের তীব্রতা রোধ ও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধানের মূল শর্ত হলো বিদেশি সামরিক সাহায্য ও কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতি যা জানাল:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল।ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপ শেষে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প ও পুতিন। এ সংঘাতের অবসান একটি স্থায়ী শান্তির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে উভয় নেতাই একমত হয়েছেন।
হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, জ্বালানি ও অবকাঠামোগত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে দুই নেতা একমত হয়েছেন। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির বিষয়ে কারিগরি আলোচনা শুরুর ব্যাপারে তাঁরা মত দিয়েছেন। এসব আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যে শিগগিরই শুরু হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতিতে ভবিষ্যতের বিরাট লাভ রয়েছে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন একমত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক চুক্তি ও শান্তি অর্জনের পর ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়।
বিশ্বের শীর্ষ পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের নেতা মধ্যপ্রাচ্য, কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এবং ইরাণের পরমাণু প্রকল্প নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে হোয়াইট হাউসের ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, মার্কেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হতে পারলে ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ নেবেন। এরই ধারাবাহিকতায় গেলো জানুয়ারি মাসে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের সঙ্গে এটি তাঁর দ্বিতীয় ফোনালাপ।
এর আগে, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইউক্রেনকে ছাড়াই রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর পর থেকে ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করে ওয়াশিংটন। পরবর্তীতে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সৌদি আরবে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সামনে আসে। কিয়েভ এতে তাদের সম্মতি জানায়। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, যুদ্ধবিরিতর প্রস্তাবটিতে তিনি রাজি থাকলেও এতে গুরুতর অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি ট্রাম্পের কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই ফোনালাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টির কথা বলা হয়। একই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউক্রেন সংঘাত নিরসন এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা করবেন দুই নেতা।
পরবর্তীতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, ‘ গেলো ১২ ফেব্রুয়ারি দুই নেতার মধ্যে প্রথম ফোনালাপে নির্দিষ্ট কিছু বোঝাপড়া আগেই হয়। তবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও স্বাভাবিকীকরণ এবং ইউক্রেন বিষয়ে একটি মীমাংসা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। দুই প্রেসিডেন্ট এসব নিয়ে আলোচনা করবেন।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বহুল প্রতিক্ষীত ফোনালাপ করেন বিশ্বের শীর্ষ দুই নেতা।
এমআর//