মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আবারও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতনের প্রশ্নটি উঠে এসেছে। এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বরং প্রশ্নটিকে কূটনৈতিক আলোচনার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে এব্যাপারে আগাম কোনো মন্তব্য করতেও অস্বীকার করেছেন ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের নতুন মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। এদিকে, বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বেগের একটি মূল জায়গাজুড়ে’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড। এবিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় সময় সোমবার(১৭ মার্চ) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল , ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন যেহেতু পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রায় ৬০ দিন ধরে দায়িত্বপালন করছেন, সেই হিসেবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি কী মূল্যায়ন করেছেন এবং এ বিষয়ে তিনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘আচ্ছা, আবারও বলছি, আপনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয়ে কথা বলছেন যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অন্যান্য দেশের ঘটনাবলি দেখেছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।’
এই পর্যায়ে ওই সাংবাদিক বিষয়টি বাংলাদেশ সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও অবশ্যই এই বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রকৃতি সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে থাকেন। তবে যখন আবার আলোচনা, কূটনৈতিক বিবেচনা এবং এর সাথে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে কথোপকথন এবং কী ঘটতে পারে সেই কথা আসে, তখন আমি এখানে অনুমান করে বলতে চাই না যে ফলাফল কী হবে। আপনিও চান না যে আমি সেটা করি। আমি মনে করি সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই সাংবাদিক পুনরায় প্রশ্নটি করার অনুমতি চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘‘না, না, আমি যার উত্তর দেব না তা হলো- সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে কূটনৈতিক বিবেচনা অথবা একটি নির্দিষ্ট দেশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে কোনো মনোভাব প্রকাশ এবং এমন কোনো পদ্ধতিতে কথা বলা যা কূটনৈতিক ধরনের কথোপকথনের মধ্যে পড়ে এবং স্পষ্টতই এসব আমি বলতে পারি না। অথবা কোনো বিষয়ে ঠিক কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে অনুমানও করতে পারি না আমি।এরপর এ প্রসঙ্গে আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ দেননি তিনি।

এদিকে, বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বেগের একটি মূল জায়গাজুড়ে’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাপ্রধানদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি সফররত তুলসী গ্যাবার্ড সোমবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগের কথা জানান তিনি। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বাংলাদেশে ‘ইসলামি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী উপাদানের’ উত্থান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে; কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবার(১৭ মার্চ) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ নিয়ে ডিএনআই তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশা করছি। গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাংলাদেশ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, যেখানে ইসলাম চর্চা হয় শান্তিপূর্ণ ও সহনশীলভাবে। একই সঙ্গে, দেশটি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোন প্রমাণ বা নির্দিষ্ট অভিযোগের উপর ভিত্তি করে নয়। বরং এটি একটি জাতির প্রতি অবিচারমূলক সাধারণীকরণ। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও উগ্রবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগ, সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।
এমআর//