সংখ্যালঘু সম্প্রদাযের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের সব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এলক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এসব পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্র্রুস।
স্থানীয় সময় বুধবার(১৮ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আবারও উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি ও ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান দস্তগীর জাহাঙ্গীর নামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাংলাদেশি সাংবাদিক।
ওই সাংবাদিকের প্রশ্নটি ছিলো, ‘মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। যদিও তিনি সরাসরি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দোষারোপ করেননি, তবে তিনি উদ্বেগগুলোকে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছেন এবং এগুলোকে অসত্য বলে অভিহিত করেছেন। গতকালই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাফতের পক্ষে একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। চলমান এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র কি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্র্রুস বলেন, ‘আমরা যে কোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতা সম্পর্কিত ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে থাকি এবং সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আমরা আশা করি যে এসব পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।’
গেলো সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তুলসীগ্যাবার্ড বলেছেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা এবং নির্যাতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হচ্ছে।
তবে সোমবার রাতেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বলা হয়, গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোন প্রমাণ বা নির্দিষ্ট অভিযোগের উপর ভিত্তি করে নয়। বরং এটি একটি জাতির প্রতি অবিচারমূলক সাধারণীকরণ। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও উগ্রবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে যেকোনো ধরনের ইসলামী খিলাফত ধারণার সঙ্গে দেশকে যুক্ত করার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
এমআর//