ধর্ম

রমজান মাসের শেষ দশকে যে আমল করবেন

রমজান মাসের শেষ দশকে বেশি বেশি আমল করার কথা বলা হয়েছে। রহমত ও মাগফিরাতের দুই দশকের পর তৃতীয় দশক হচ্ছে জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের দশক। শেষ দশকে নবীজির (সা.) ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত, তিনি কখনো এসব রাত জাগরণ ছাড়া কাটাননি।

রমজানের শেষ দশক আসলে নবীজি (সা.) পরনের কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ২০২৪)

পুরো রমজান মাস ফজিলত ও বরকতে পূর্ণ। এই মাসের প্রথমভাগে আল্লাহ তায়ালা রহমত নাজিল করেন, মধ্যভাগে মাগফেরাত ও ভাগে নাজিল হয় নাজাত।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান এমন এক মাস, যার শুরুতে রহমত, মাঝে মাগফিরাত এবং শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (ইবন খুজাইমা, হাদিস : ১৮৮৭)

রমজানের শেষ ভাগ বা শেষ দশকে নাজাতের পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুন্নত ইতিকাফ, শবে কদর অনুসন্ধান, সদকতুল ফিতর আদায়, ঈদের চাঁদ দেখা ও ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নত আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ।

লাইলাতুল কদর সন্ধান করা

পবিত্র লাইলাতুল কদরের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো রাতকে নির্ধারণ করা না হলেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ খোঁজ কর। আলেমগণ এ রাতকে লাইলাতুল কদর হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। তাই শেষ দশকের রাতে লাইলাতুল কদর লাভে বেশি বেশি ইবাদত করা আবশ্যক।

বুখারি ও মুসলিম শরীফে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে সওয়াবের আশায় ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’

এ রাতে কুরআন নাজিলের সম্মানার্থে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন- ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সুতরাং কুরআন নাজিলের রাতে কুরআনকে বাস্তবজীবনে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্বনবির সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করাই হবে লাইলাতুল কদরের সেরা প্রাপ্তি।

ইতেকাফ

লাইলাতুল কদর লাভে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফে অংশগ্রহণ করে থাকেন অনেক ধর্ম মুসলমানরা।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর জন্য এ রাতের কিছু করণীয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

গোনাহ মাফ চাওয়া

রমজানের শেষ দশ দিন বেশি বেশি করে গোনাহ মাফের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এ রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর নিকট গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। তাই উম্মতে মুহাম্মাদির উচিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়ার মাধ্যমে গোনাহ মাফের জন্য তাওবা করা। দোয়াটি হলো-

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ`ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ`ফওয়া; ফা`ফু আন্না।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

সদকাতুল ফিতর আদায়

ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে রমজানের শেষ দশকে বা শেষ দশকের আগে তা আদায় করা উত্তম। এতে করে অসহায় মানুষদের জন্য সুবিধা। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।

কোনো কোনো সাহাবী থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বে ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’একদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬০৬)

কল্যাণের আবেদন

লাইলাতুল কদর যেহেতু হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত। তাই বান্দার জন্য এ রাতের হক বা অধিকার হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি মানুষের দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা। যাতে এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন। দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ দান করেন।

কাজা নামাজ আদায় করা

মানুষের জীবনে কারণে অকারণে অসংখ্য ওয়াক্ত নামাজ ছুটে যায়। তাদের জন্য নামাজ কাযার সূবর্ণ সময় পবিত্র লাইলাতুল কদর। কারণ আল্লাহ তাআলার ঘোষণা, লাইলাতুল কদর হাজার মাসে চেয়ে উত্তম।

এ রাতে যদি কেউ এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা আদায় করে তবে আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী হাজার ওই ওয়াক্তের নামাজের কাজা আদায় হওয়ার কথা। আর এমনটি আশা করে কাজা আদায় করা মুসলিম উম্মাহর জন্য জরুরি।

সুতরাং এ রাতে ন্যূনতম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একবার করে কাজা আদায় করা উচিত। আল্লাহ ইচ্ছা করলে এ ওসিলায় বিগত জীবনে ছুটে যাওয়া নামাজগুলোর কাজা আদায়কে কবুল করে ওই বান্দাকে মাফ করে দিতে পারেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র লাইলাতুল কদর আতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন রমজান | শবে কদর | ইতেকাফ