শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে আমরা দৈনন্দিন জীবনে হেঁটে থাকি। হাঁটা শুধুমাত্র আমাদের শরীরচর্চা হিসেবেই নয়, শরীরের সাথে মানসিকভাবেও এটি আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। সকালে হাঁটে যারা অনেকেই এই হাঁটাকে মর্নিং ওয়ার্কিং-ও বলে। হাঁটার সময় যদি সঠিক ভঙ্গিতে না হাঁটেন, তাহলে সেটি স্বাস্থ্য সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে। যার কারণে আমাদের শরীরের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে।
ক্রীড়াবিজ্ঞানী ও ওয়াকঅ্যাক্টিভ পদ্ধতির প্রবক্তা জোয়ানা হল হাঁটার সময় বেশ কিছু সাধারণ ভুলের কথা বলেছেন। যেগুলি আমরা হাঁটার সময় প্রায়ই ভুল করে থাকি। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমরা অনেকেই সচেতন নই।
১. ভুল পেশির ব্যবহার
দীর্ঘ সময় হাঁটার ফলে কোমরের নিচের অংশে ব্যথা অনুভব হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো অনেকেই নিতম্বের ফ্লেক্সর পেশি অতিরিক্ত ব্যবহার করেন। জোয়ানার মতে, এই পেশির অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিক চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং পেশিতে টান ধরতে পারে। সঠিক হাঁটার জন্য পিঠের পেশি এবং পায়ের কাফ পেশি ব্যবহার করা উচিত। এতে হাঁটা সহজ হয় এবং শরীরের পেশিগুলি সচল থাকে।
২. হাঁটার সময় মাথার অবস্থান
হাঁটার সময় যদি মাথা নিচু করে ফোন বা রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটেন তাহলে এর ফলে শুধু আপনার ভঙ্গি ভুল হচ্ছে না এতে কাঁধে, পিঠে এবং মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। ভুল ভঙ্গিতে চলার কারণে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা ও গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলস্বরূপ অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। হাঁটার সময় মাথা এবং মেরুদণ্ড সমান্তরাল রেখে হাঁটা উচিত। এতে শরীরের ভঙ্গি সঠিক থাকে এবং সঠিক শ্বাসপ্রশ্বাস পাওয়া যায়।
৩. পায়ের সমতল অংশ দিয়ে হাঁটা
অনেকেই হাঁটার সময় পায়ের সমতল অংশ মাটিতে ফেলেন, যা একটি ভুল অভ্যাস। এটি "প্যাসিভ ফুট স্ট্রাইক" নামে পরিচিত। এর ফলে হাঁটুতে অতিরিক্ত ঝাঁকুনি পড়ে, যা গাঁটের ক্ষতি করতে পারে। সঠিকভাবে হাঁটতে, প্রথমে গোড়ালি এবং তারপর পায়ের গোড়া মাটিতে পড়া উচিত। এতে হাঁটু ও গাঁটে চাপ কম পড়ে এবং হাঁটা আরও নিরাপদ হয়।
৪. হাঁটার সময় হাতের অবস্থান
অনেকেই হাঁটার সময় হাত গুটিয়ে রাখেন বা স্থির অবস্থায় রাখেন, যা শরীরের জন্য উপকারি নয়। সঠিকভাবে হাঁটার জন্য হাত দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটা উচিত। এতে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে, পেশিগুলির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং শরীরের কার্যকলাপ আরও সচল থাকে। যদিও প্রথমে অস্বস্তি হতে পারে, তবে নিয়মিত অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
৫. ভুল জুতোর ব্যবহার
হাঁটার জন্য সঠিক জুতো নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল জুতো পরলে পায়ের পাতায় অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা গাঁটে ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাঁটার জন্য আরামদায়ক, সঠিক ফিটিং জুতো পরা উচিত, যাতে পায়ের পাতার উপর কোনো অস্বস্তি বা চাপ না পড়ে।
৬. বড় পা ফেলে হাঁটা
অনেকে মনে করেন বড় পা ফেললে হাঁটা আরও কার্যকর হবে, কিন্তু এটি ভুল ধারণা। বড় পা ফেলা শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং হাঁটু, পায়ে চোটের ঝুঁকি বাড়ায়। হাঁটার জন্য স্বাভাবিক পা ফেলা এবং আরামদায়ক গতি বজায় রাখা উচিত। এতে শরীরের উপর চাপ কম পড়ে এবং হাঁটা নিরাপদ থাকে।
৭. অতিরিক্ত ঝুঁকিতে হাঁটা
কিছু মানুষ মনে করেন, হাঁটার সময় দ্রুত হাঁটলেই বেশি ক্যালোরি খরচ হবে এবং দ্রুত ওজন কমবে। তবে, অতিরিক্ত দ্রুত হাঁটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দ্রুত হাঁটার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং পেশিতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। হাঁটার জন্য একটি স্বাভাবিক গতি বজায় রাখা উচিত যাতে শরীরের উপর চাপ না পড়ে এবং হাঁটা আরও কার্যকর হয়।
হাঁটা, যতই সহজ মনে হোক না কেন তা যদি সঠিকভাবে না করা হয় তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। হাঁটার সময় এসব ছোট ছোট ভুলগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং সঠিক ভঙ্গি অনুসরণ করলে আপনি আরও সুস্থ এবং শক্তিশালী থাকতে পারবেন। তাই, হাঁটার প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে মনোযোগ দিন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি সঠিকভাবে হাঁটছেন। সুস্থ শরীরের জন্য এই সঠিক অভ্যাস বজায় রাখুন এবং সুস্বাস্থ্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে যান।
এসকে//