গাজার আকাশে তখনো যুদ্ধের গর্জন । কিন্তু এক কোণে , খান ইউনিসের পাশের সমুদ্রতীরবর্তী শান্ত স্যান্ড বিচে , রঙ-তুলি হাতে এক তরুণী হয়তো ভেবেছিলেন আরও একটি মুখ আঁকবেন আজ। হয়তো একজন শহীদ বাবার, কিংবা একটি কাঁদতে থাকা শিশুর। কিন্তু ঠিক তখনই , এক অদৃশ্য বর্বরতা আছড়ে পড়ল তার জীবন ক্যানভাসে। নিভে গেল আলো , থেমে গেল তুলি।
হ্যাঁ সে আর কেউ নয় ফিলিস্তিনি শিল্পী দীনা খালেদ জাউরুব। বয়স মাত্র ২২। কিন্তু বয়সের চেয়ে অনেক বেশি গভীর ছিল তার চোখ , আর অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল তার ক্যানভাস। তিনি শুধু ছবি আঁকতেন না , তিনি ইতিহাস রচনা করতেন। তার তুলির প্রতিটি আঁচড়ে ফুটে উঠত ফিলিস্তিনের যন্ত্রণা , অশ্রু , আর অবিনাশী লড়াই।
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরের পাশেই সমুদ্রের ধারে , স্যান্ড বিচ রিসোর্টের কাছে একটি তাবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন দীনা। সেই তাবুই হয়ে উঠল মৃত্যুপুরী। ইসরাইল বিমান বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়ে গেল আশ্রয় , নিভে গেল দীনার জীবনপ্রদীপ।
যুদ্ধের বিভীষিকায় জর্জরিত এক বিকেলে , যখন গাজার বহু পরিবার আশ্রয়হীন-কণ্ঠরুদ্ধ ,তখনই এই হামলা হয়। ঠিক সেই মুহূর্তেই থেমে যায় একটি রঙিন হৃদয়ের স্পন্দন। ইসরাইলের যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমা আঘাত হানে স্যান্ড বিচের তাবুতে। তাবুটি গুঁড়িয়ে যায় মুহূর্তে এবং তার নিচে চাপা পড়ে দীনা। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভাগ্য এখনও অজানা।
দীনা ছিলেন সেই বিরল প্রতিভাদের একজন। যিনি কেবল শিল্পী ছিলেন না ,ছিলেন একটি নিপীড়িত জাতির আত্মা। তার আঁকা প্রতিকৃতিগুলো ফিলিস্তিনের শহীদ শিশু , বিধ্বস্ত পরিবার , ভাঙা স্কুল সব কিছুরই জীবন্ত সাক্ষ্য।
২০১৫ সালে তিনি ‘আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছিলেন শিশু অধিকারের ওপর সেরা চিত্রকর্মের জন্য। তার তুলিই ছিল তার প্রতিবাদ , তার অস্ত্র। কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক এর বরাতে মিডল ইস্ট আই গণমাধ্যম এই মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন । তবে এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
একজন শিল্পীর মৃত্যু কখনোই শুধু একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয় , তা একটি দৃষ্টিভঙ্গির মৃত্যু । ফিলিস্তিনের যন্ত্রণা আর লড়াইকে যিনি তুলির রঙে জীবন্ত করে তুলেছিলেন , তার চলে যাওয়া যেন এক অপূরণীয় সাংস্কৃতিক ক্ষয়।
এসকে//