বিরল গয়নাগুলি যেন ইতিহাসের সাক্ষী । কেবল রাজারানীদের গল্পেই নয় , ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানীর ঘরনি নীতা আম্বানী তার নিজের গয়নার বাক্সে সযত্নে তার গয়নাগুলি সাজিয়ে রেখেছেন । যেসব গয়না এক সময় শুধুমাত্র মুঘল সম্রাট শাহজাহান অথবা পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয় মহারাজাদের কাছে সীমাবদ্ধ ছিল , সেগুলো আজ নীতার সংগ্রহে।
নীতা আম্বানীর সংগ্রহে যেমন রয়েছে মুঘল সম্রাটদের যুগান্তকারী রত্ন গয়না , তেমনি রয়েছে এর পেছনে ঐতিহাসিক মুহূর্তের কাহিনী । তার সংগ্রহের এক একটি অলঙ্কার এক একটি আলাদা ইতিহাস বলছে । যেখানে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসনকাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত সেগুলির অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় ।
মুঘল বাজুবন্ধ :
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে এক কালে নীতা আম্বানী কালো বেনারসির শাড়ির সঙ্গে একটি বিশেষ বাজুবন্ধ পরেছিলেন হিরে আর চুনি বসানো । তবে এই বাজুবন্ধটি শুধুমাত্র সাধারণ বাজুবন্ধ নয় , এটি মুঘল যুগের ঐতিহাসিক শরপেঁচ বা কলগি। যা সম্রাট শাহজাহান এর পাগড়ির একটি অমূল্য অংশ ছিল।
এই গয়নাটির পাথরে একটি খোদাই করা লেখা ছিল - ১২/শাহজাহান ইবন জাহাঙ্গির শাহ/ ১০৪৯, যা ইসলামি বর্ষ ১০৪৯ হিজরির (১৬৩৯-৪০ খ্রিস্টাব্দ) সময়ে তৈরি হয়েছিল । এমন ঐতিহাসিক গয়না আজকের দিনের এক আধুনিক মহিলার হাতে দেখে খুব কম লোকই জানেন যে , এটি একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্রাটদের মধ্যে ছিল।
এটি কেবল গয়না নয় বরং , ছিল সেই সময়ের বিজয়ের প্রতীক। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের হাত থেকে প্রাপ্ত এই অলঙ্কারটির বর্তমান মূল্য ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । ১৮৭৫-১৯০০ সাল পর্যন্ত এটি পুনঃনির্মিত হলেও এর পেছনের ইতিহাস আজও তার উজ্জ্বলতা বজায় রেখেছে।
মিরর অফ প্যারাডাইস :
নীতা আম্বানী যখন তার পুত্র অনন্ত আম্বানী এর বিয়েতে উপস্থিত হন তখন তিনি একটি অতিরিক্ত এক্সক্লুসিভ হিরের আংটি পরেন , যার নাম ‘মিরর অফ প্যারাডাইস’ । এই আংটিটির হিরে ৫২.৫৮ ক্যারাট , যা ১৮০০ সালের আগে গোলকোন্ডার খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে এটি মুঘল সম্রাটদের রত্নভান্ডারে সংরক্ষিত ছিল।
২০১৯ সালে এই হিরেটি ক্রিস্টির নিলামঘরে ৬৫ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয় , যা ভারতীয় মুদ্রায় ৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার সমান । এই সময়ে এসে আজ নীতার গয়নার বাক্সে এটি সংরক্ষিত । একমাত্র নীতাকেই একাধিক অনুষ্ঠানে এই আংটি বারবার পরিধান করতে দেখা গেছে । যার মাধ্যমে তিনি তার গয়নার প্রতি ভালোবাসা ও তার ইতিহাসের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করেছেন।
নীতা আম্বানী নিজের গয়না সংগ্রহের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এই রত্নগুলিকে সংগ্রহ করেন । এক দিকে যেমন তার ঐতিহাসিক রত্নগুলির প্রতি আগ্রহ ছিল , তেমনি তিনি নিজের সৌন্দর্য ও আভিজাত্যকেও এসব গয়নাতে সঠিকভাবে মেলে ধরেন । এই গয়নাগুলির মধ্যে বেশিরভাগই মূলত নিলাম ঘর থেকে সংগ্রহ করা হয় । যেমনটি ঘটেছিল ‘মিরর অফ প্যারাডাইস’-এর ক্ষেত্রে।
টিয়া লকেট :
২০১৭ সালে নীতা আম্বানী যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন । তখন তিনি এক টিয়া পাখির মতো আকৃতির লকেট পরেছিলেন , যা ছিল মূলত দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী গয়না । এই লকেটটি পান্না, চুনি, মুক্তো ও হিরে মিশ্রিত মিনাকারি কারুকাজে পরিপূর্ণ ছিল । এটি ছিল ২০০ বছর পুরনো , যা খুব সম্ভবত দক্ষিণ ভারতের কোনও প্রাচীন রাজার দরবারে তৈরি হয়েছিল।
এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন রত্নগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত । সেগুলির মধ্যে মুঘল সম্রাট শাহজাহান , গোলকোন্ডার খনি এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীরতা রয়েছে । আজকের দিনে এসে নীতার সংগ্রহে থাকা রত্নফুলো জীবন্ত ইতিহাস হিসেবে বিরাজ করছে।
যে গয়না শুধু রাজারানীদের প্রাপ্য ছিল , সেই গয়নাগুলি আজ এক মহিলার হাতে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে । নীতার এই সংগ্রহ শুধুমাত্র অলঙ্কার নয় বরং , এক অমিত ঐতিহ্যের ধারক , যা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নিলাম ঘর থেকে সুরক্ষিত হয়ে আজও নজরকাড়া।
এসকে//