কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর রক্তক্ষয়ী হামলার জবাব দিতে এবার শক্ত হাতে পালটা আঘাত হানল ভারত। মঙ্গলবার (০৬ মে) গভীর রাতে চালানো এই অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরসহ একাধিক অঞ্চলে চালানো হয় ভয়াবহ বিমান হামলা। ভারতের এ হামলায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন বেসামরিক মানুষ ও আহত হয়েছেন ৪৬ জন ।
বুধবার (০৭ মে) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকেই পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পাকিস্তান এই সর্বশেষ হামলাকে ‘স্পষ্ট যুদ্ধের ঘৃণ্য উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
অপারেশন সিঁদুর কী?
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের নয়টি স্থানে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ভারত। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, এসব লক্ষ্যবস্তুতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অবকাঠামো ছিল, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। অভিযানে সন্ত্রাসীদের আস্তানা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে দাবি ভারতীয় সেনাবাহিনীর।
‘সিঁদুর’- লাল রঙের এক ধরনের পাউডার, যা হিন্দু বিবাহিত নারীরা সিঁথিতে পরে থাকেন। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত হন ২৬ জন পুরুষ, যাদের বেশিরভাগই হিন্দু। তাদের বিধবা স্ত্রীদের সিঁদুরের প্রতি সম্মান জানাতেই এই অভিযানের নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে ইসলামাবাদ জানিয়েছে, ভারত পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে এবং এতে অন্তত দুই ডজনের বেশি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। পাকিস্তান সরকারও পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং এগুলো ভারতের আকাশসীমাতেই করা হয়।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের স্থানীয় সরকারের চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারতের তিনটি যুদ্ধবিমান হিমালয়েলের বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ধ্বংস হয়েছে। এসব বিমানের পাইলটকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়।
পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের বিমান হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভারত জানিয়েছে, কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলায় ৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
পাকিস্তানে হামলার পরই ভারত তাদের একাধিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া, আকাশা এয়ার, ইন্ডগো এবং স্পেশালজেট তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। অন্যদিকে কাতার এয়ারওয়েজ পাকিস্তানে তাদের ফ্লাইট অস্থায়ীভাবে বাতিল করেছে।
থাই এয়ারওয়ে ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়াগামী ফ্লাইটগুলোকে অন্য রুটি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তাদের চলমান ফ্লাইটগুলো করাচিতে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য ফ্লাইটগুলো স্থগিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে ভারতের হামলার পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এসি//