পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের কার্যালয় এবং পবিত্র কোরআনে আগুন দিয়ে পোড়ানোর অভিযোগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। অবলিম্বে দোষী বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং থানার ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (১৬ মে) সকাল ১০টার দিকে আটঘরিয়ার দেবোত্তরস্থ উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হোন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। পরে তারা পাবনা-আটঘরিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। নেতাকর্মীরা পোড়ানো কোরআন শরীফ দেখিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এসময় জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল জামায়াতের কার্যালয়ের পোড়ানো বিভিন্ন চিত্র সাংবাদিকদের ঘুরে দেখান।
অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন, উপজেলা বিএনপির চাঁদাবাজ ও দখলবাজ সন্ত্রাসীরা শুধু জামায়াতের কার্যালয় পোড়ায়নি তারা ইসরাইলের কায়দায় বর্বর হামলা চালিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামী বইপত্র পুড়িয়েছে। অবিলম্বে এই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এছাড়াও আটঘরিয়ার থানার ওসি সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে তিনি নিরপক্ষতা হারিয়েছেন, অবিলম্বে থানার ওসিকেও প্রত্যাহার করতে হবে।
এর আগে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা দেবোত্তর ডিগ্রী কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতের অফিস এবং ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনা উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান , দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের জন্য কলেজ থেকে তফসিল ঘোষণা করা হয়। অভিভাবক সদস্য মনোনয়নপত্র উত্তোলনের শেষদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন দুপুরে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আছিম উদ্দিন অভিভাবক সদস্য পদের মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেন। তার সাথে আরও দুজন বিএনপি সমর্থিত অভিভাবক ও মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন।
কিছুক্ষণ পর জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির নকিবুল্লাহ, সাবেক আমির নাসির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লাহসহ বেশকিছু নেতাকর্মী গিয়ে তাদের মনোনীত একজনের মনোনয়নপত্র চান। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বাঁধা প্রদান করা হয়। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় জামায়াতের একজন মারধরের শিকার হন।
এ খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবিরসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, ও সমর্থক দেবোত্তর বাজারে জড়ো হয়। তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দেবোত্তর বাজার ঘুরে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এরপর জামায়াতের নেতাকর্মীরা দুপুরে যোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাজার প্রদক্ষিণ করার পর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
পরে সন্ধ্যার দিকে লাঠি ও লোহার পাইপসহ সশস্ত্র অবস্থায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দেবোত্তর বাজারে বিএনপি অফিস ও আশপাশের কমপক্ষে ২৩টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়। উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। এদিকে অবস্থা বেগতিক ভেবে মুর্হুতের মধ্যে বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়।
আটঘরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, উভয়পক্ষ উভয়পক্ষের অফিস ভাঙচুর করেছে। কিছুটা সংঘর্ষ হয়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আই/এ