লাইফস্টাইল

সহকর্মীদের সঙ্গে যেমন আচরণ করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের প্রত্যেকের একটি বাড়ি থাকে, যেখানে আমরা পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাই। তবে জানেন কি, প্রত্যেকের আরও একটি ঘর রয়েছে? হ্যাঁ, সেটি হচ্ছে আমাদের কর্মস্থল,যাকে আমরা ‘সেকেন্ড হোম’ বা ‘সেকেন্ড হাউস’ বলে থাকি।  আমরা আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই অফিসে কাটাই এবং সেখানেই সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের জন্য একসাথে সময় কাটাই।   

কর্মস্থলে আমরা অনেক সময় এমন সম্পর্ক তৈরি করি যা পরিবার বা ঘরের মতো মনে হতে শুরু করে।  সহকর্মীরা হয়ে ওঠে আমাদের কাছের বন্ধু, কখনও কখনও পরিবারের সদস্যও।  তবে যতই কাছের সম্পর্ক গড়ে উঠুক না কেন, পেশাদার পরিবেশে সবসময় পেশাদার আচরণ বজায় রাখা জরুরি।  এটি শুধু কাজের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে না বরং, সবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কাজের লক্ষ্য এক রাখতেও সহায়ক।  সহকর্মীর সাথে আপনার সম্পর্ক এবং আচরণ কেমন হওয়া উচিত চলুন তা জেনে নেই। 

হাসি দিয়েই দিন শুরু করুন

প্রতিদিনের কাজ শুরু করার আগে সহকর্মীদের প্রতি একটি মিষ্টি হাসি এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।  এর ফলে আপনার অফিসের পরিবেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে এবং দলগত কাজের মানসিকতা তৈরি হবে।  ছোট্ট এই ইঙ্গিতটি সহকর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং আপনার কাজের পরিবেশ আরও সজীব হবে।

সহকর্মীর ভুল ধরবেন না

কাজ করার সময় ছোটখাটো ভুলত্রুটি হতে পারে, তবে অন্যের ভুল তুলে ধরা বা উপহাস করা উচিত নয়।  বরং, সহানুভূতির সাথে তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে দিন।  এভাবে আপনার সহযোগিতার মনোভাব প্রতিফলিত হবে এবং কাজের পরিবেশ আরও হালকা হবে।

পরনিন্দা বা পরচর্চা এড়িয়ে চলুন

অফিসে পরনিন্দা বা পরচর্চা করার জন্য জায়গা নেই। সহকর্মীর পেছনে তার সমালোচনা করলে আপনার নিজের কাজের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি কোনও বিষয় নিয়ে আপনার সমস্যা থাকে, সরাসরি তার সাথে আলোচনা করুন, অন্যথায় এটি আপনার নিজস্ব কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

সহকর্মীদের সঙ্গে মানিয়ে চলুন

একই অফিসে সবাই কখনোই একে অপরের মতো হতে পারে না।  কিছু সহকর্মী হয়তো আপনার মতের বিপরীত হতে পারে, তবে তাদের খারাপ আচরণে মন খারাপ না করে তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন।  আপনার নিজের সম্মান বজায় রাখতে সতর্ক থাকুন, এবং কারও ভুল আচরণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

সহকর্মীর কাজের প্রশংসা করুন

যখন কোনও সহকর্মী ভালো কাজ করে, তখন তার কাজের প্রশংসা করা উচিত।  প্রশংসা শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে এবং এতে আপনার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়।  সহকর্মীকে উৎসাহিত করলে ভবিষ্যতে তারা আপনার কাজেও সাহায্য করবে এবং কর্মক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে উঠবে।

অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিন

অফিসে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সহকর্মীদের মতামত নিন।  একতরফা সিদ্ধান্ত না নিয়ে দলগতভাবে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।  এতে আপনার সহকর্মীরা নিজেদের মতামত শেয়ার করতে উৎসাহিত হবে এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে।

ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক থাকুন

অফিসের পরিবেশে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হতে পারে, তবে অফিসের ভেতর এই সম্পর্কগুলি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।  সম্পর্ক যদি ভেঙে যায়, তবে একই অফিসে একে অপরের সঙ্গেই কাজ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।  তাই ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করা থেকে কিছুটা দূরে থাকা সবচেয়ে ভালো।

মেপে কথা বলুন

অফিসে নিজের অধিকার রক্ষায় কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে, তবে অপ্রয়োজনীয় বা বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত।  কোনও সহকর্মী বা অফিসের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা আপনার পেশাদারিত্বের ক্ষতি করতে পারে।  সহকর্মী সম্পর্কে খারাপ কথা বলার কারণে আপনার খ্যাতি নষ্ট হতে পারে, যা কর্মক্ষেত্রে আপনার সম্পর্ককে কঠিন করে তুলতে পারে।

অপ্রয়োজনে যোগাযোগ থেকে বিরত থাকুন

অফিসের বাইরে সহকর্মীদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করা উচিত নয়।  বিশেষ করে ছুটির দিনে যদি কোনও জরুরি কথা না থাকে, তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকুন। অপ্রয়োজনীয় ফোন কল বা সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করার ফলে সহকর্মী বিরক্ত হতে পারেন এবং এটি আপনার পেশাদারিত্বে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

খোলামেলা আলোচনা করুন

যদি কোনও সহকর্মীর আচরণে আপনি কষ্ট পেয়ে থাকেন, তবে খোলামেলা আলোচনা করুন। সরাসরি ও শান্তভাবে বিষয়টি তার সামনে তুলে ধরুন।  উচ্চস্বরে তর্ক করার চেয়ে, সদ্ভাবে ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করলেই সমস্যার সমাধান সহজ হয়।

সবশেষে কর্মক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।  যদি আপনাকে কোনও নির্দিষ্ট কাজের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে সেটি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।  পাশাপাশি পরস্পরের মধ্যে আন্তরিকতা ও সহানুভূতির সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।  এই অভ্যাসগুলো আপনার কর্মক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেও সহায়তা করবে।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #অফিস #ব্যবহার #সহকর্মী