আন্তর্জাতিক

শেষপর্যন্ত ধরা খেলেন ‘লুটেরি দুলহান’!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ছবি: এনডিটিভি

৩২ বছর বয়সী অনুরাধা পাসওয়ান- নামটা যেন ভয়ানক প্রেমের আরেক নাম! যিনি প্রেমের নাটক সাজিয়ে একে একে বিয়ে করেছেন অন্তত ২৫ জন যুবককে। আর বিয়ের পর? সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে গায়েব, সঙ্গে নিয়ে গেছেন স্বামীদের পরিবারের সব কিছু- গহনা, টাকা, এমনকি আত্মীয়স্বজনের ভরসাটুকুও!

অবশেষে রাজস্থানের সাওয়াই মধুপুর এলাকায় ফাঁদ পেতে তাকে পাকড়াও করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২০ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে জানা গেছে, রাজস্থানের সাওয়াই মধুপুরে শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন ‘লুটেরি দুলহান’ অনুরাধা পাসওয়ান।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রেমের অভিনয় করে বিয়ে করেছেন অন্তত ২৫ জন যুবককে—আর তারপরই বরের ঘর থেকে বউ নয়, যেন ডাকাত দল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সবকিছু! লাখ লাখ টাকার গয়না, নগদ অর্থ—সব নিয়ে গায়েব!

অনুরাধা পাসওয়ান নতুন নাম, নতুন শহর এবং নতুন পরিচয় ব্যবহার করে পুরুষদের ভুয়া বিয়েতে রাজি করাতেন। এরপর আদর্শ বধু-পুত্রবধূর ভান করে গয়না ও নগদ অর্থ নিয়ে চম্পট দিতেন। তবে এবার সাওয়াই মধুপুর পুলিশ তাকে পাল্টা ফাঁদে ফেলে ভুয়া বিয়ের নাটক করে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অনুরাধা তার পরিবারের একমাত্র সদস্য, আর্থিক অবস্থা গরিব ও অসহায়, তার বেকার এক ভাই আছে, তিনিও বিয়ে করতে চান, কিন্তু অর্থাভাবে নতুন জীবন শুরু করতে পারছেন না—৩২ বছর বয়সী অনুরাধা পাসওয়ান এভাবেই পাশের বাড়ির গরিব, সুন্দরী নারীর ভান ধরতেন এবং পুরুষদের ফাঁদে ফেলতেন।

তবে তিনি আসলে একটি ভুয়া বিয়ে চক্রের নেত্রী। এই চক্র মানুষের বিশ্বাস ও অর্থ প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। পাসওয়ানের দলের সদস্যরা সম্ভাব্য ‘বরদের’ কাছে তার ছবি ও প্রোফাইল পাঠাত। দলেরই আরেক সদস্য ঘটক সেজে বিয়ে ঠিক করার জন্য ২ লাখ টাকা চাইতেন। চুক্তি পাকা হয়ে গেলে বিয়ের সম্মতিপত্র তৈরি করা হতো। এরপর মন্দির বা বাড়িতে রীতি অনুযায়ী বিয়ে হতো।

তবে আসল নাটক শুরু হতো এরপর। অনুরাধা পাসওয়ান তার বর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে খুব মিষ্টি ও নিষ্পাপ ব্যবহার করতেন। তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে তিনি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি তার পরিকল্পনার চূড়ান্ত ধাপটি কার্যকর করতেন। খাবারে মাদক মিশিয়ে গয়না, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতেন।

গত ২০ এপ্রিল সাওয়াই মধুপুরের বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মা মধ্যপ্রদেশের অনুরাধা পাসওয়ানকে বিয়ে করেন। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হিন্দু রীতিতে এই বিয়ে হয়। সাধু মীনা নামের এক ঘটকের মাধ্যমে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। সেই ঘটকও এই বিয়ের জন্য ২ লাখ টাকা নেন। বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই পাসওয়ান ১ লাখ ২৫ হাজার রুপির গয়না, ৩০ হাজার নগদ রুপি এবং ৩০ হাজার রুপির একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান।

বিষ্ণু শর্মা বলেন, ‘আমি ঠেলাগাড়ি চালাই। ঋণ করে বিয়ে করেছিলাম। আমি একটি মোবাইলও ধার করেছিলাম, সেটাও সে নিয়ে গেছে। আমি কখনোই বুঝতে পারিনি যে সে আমাকে ঠকাবে।’ যে রাতে অনুরাধা তাঁর বাড়ি ছাড়েন সে রাতের কথা স্মরণ করে বিষ্ণু বলেন, তিনি সেদিন রাতে কাজ থেকে দেরিতে ফিরেছিলেন এবং রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত বেশি ঘুমাই না, কিন্তু সেদিন রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম, যেন কেউ আমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল।’ বিষ্ণুর মা-ও এই ঘটনায় হতবাক। এরপর তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে।

বিষ্ণুর দেয়া তথ্য ধরে নাটকীয় অভিযানে নামে সাওয়াই মধুপুর পুলিশ। অনুরাধাকে ধরতে তৈরি হয় সিনেমার মতো এক ফাঁদ। পুলিশ দলের এক কনস্টেবলকে 'পাত্র' বানিয়ে ঘটকের সঙ্গে যোগাযোগ করানো হয়। ঘটকও যেন 'প্রোফেশনাল'—ঝুলিতে সাজানো কয়েকটি মেয়ের ছবি দেখিয়ে শুরু করে পাত্র-পছন্দ পর্ব।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তদন্তে দেখা যায়, অনুরাধার সব পরিচয়পত্র আর বিয়ের কাগজপত্র ছিল পুরোপুরি ভুয়া। তবু ফাঁদে পা দেন ‘লুটেরি দুলহান’। নাটকীয়ভাবে রাজি হয়ে যান বিয়েতে। আর সেই রাজি হওয়াই কাল হলো। ঠিক তখনই ছক কষে পুলিশ পৌঁছে যায় মধ্যপ্রদেশের ভোপালে, আর সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় ‘সিলভার স্ক্রিনের চিত্রনাট্য হার মানানো’ কনে অনুরাধা পাসওয়ানকে!

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #প্রেম #বিয়ে #প্রতারণা