পবিত্র হজ, ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। প্রতিবছরই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসলিম হজ পালন করতে সৌদি আরবে সমবেত হন। হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো আরাফাতের ময়দানে প্রদত্ত খুতবা, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
চলতি বছর ১৪৪৬ হিজরির পবিত্র হজের খুতবা আগামী ৫ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র আরাফাতের ময়দানে দেওয়া হবে। ওই দিন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ মসজিদে নামিরা থেকে আরবি ভাষায় এই খুতবা দেবেন। প্রযুক্তির সহায়তায় বিশ্বের মুসলিমরা সরাসরি এ খুতবার সম্প্রচার উপভোগ করতে পারবেন।
টানা ষষ্ঠবারের মতো এবারও হজের খুতবা বাংলাসহ ২০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। এ কাজের তত্ত্বাবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী সাধারণ কর্তৃপক্ষ।
২০টিরও বেশি ভাষায় খুতবা সম্প্রচারের তালিকায় রয়েছে: ইংরেজি, ফরাসি, মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, বাংলা, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়ালাম, ফিলিপিনো ও জার্মান। একইসঙ্গে, মদিনার মসজিদে নববীর খুতবার অনুবাদও সম্প্রচারিত হবে।
বাংলা অনুবাদ কার্যক্রমে এবার যুক্ত আছেন ড. মুহাম্মদ খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ফারুক এবং নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী। মূল আরবি খুতবার সঙ্গে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এই অনুবাদ।
২০১৮ সালে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বিশেষ নির্দেশনায় খুতবা অনুবাদ প্রকল্পের সূচনা হয়। প্রথমে ৫টি ভাষায় সম্প্রচার শুরু হলেও, ধাপে ধাপে ভাষার সংখ্যা বেড়ে এখন ২০টিরও বেশি হয়েছে।
বাংলা ভাষা ২০২০ সালে এই প্রকল্পে প্রথম যুক্ত হয়। তখন ১০টি ভাষায় খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার হতো। পরের বছর ২০২১ সালেও বাংলাসহ ১০টি ভাষায় খুতবা সম্প্রচার হয়। এরপর ২০২২ সালে ১৪টি, ২০২৩ সালে ২০টি এবং ২০২৪ সালে ২০টিরও বেশি ভাষায় আরাফার খুতবা অনুবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়া, শুধু হজ নয়—প্রতি সপ্তাহের জুমা, দুই ঈদ, বৃষ্টির নামাজ, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নামাজ, হজ ও ওমরাহ সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনা ও বক্তব্যের অনুবাদও এই প্রকল্পের আওতায় সম্প্রচার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইসলামের শান্তির বাণী বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমদের কাছে সহজেই পৌঁছাবে।
সৌদি সরকার হজ উপলক্ষে হাজিদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও নির্বিঘ্ন হজ পালনে বিস্তৃত প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খুতবা অনুবাদের এই উদ্যোগ বিশ্ব মুসলিম সমাজে ইসলামের মর্মবাণী ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি মুসলিম ঐক্য, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে।
এসি//