অনেকেই প্রায়শই ছোটখাটো বিষয় ভুলে যান, যা কখনো কখনো স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তির সমস্যা বা মানসিক ক্ষমতার হ্রাসের কারণ হতে পারে। এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও বুদ্ধিমত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পুষ্টিবিদরা জানান, নির্দিষ্ট কিছু খাবার, বিশেষ করে বাদাম, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে কাঠবাদাম এবং আখরোট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই লেখায় আমরা এই দুটি বাদামের উপকারিতা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অন্যান্য খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মস্তিষ্কের জন্য যেটি বেশি কার্যকর-
কাঠবাদাম এবং আখরোট উভয়ই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আখরোটের কিছু অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, আখরোটে কাঠবাদামের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা উন্নত করতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আখরোটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত মানসিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অন্যদিকে, কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকায় এটি আখরোটের তুলনায় কিছুটা কম কার্যকর। তাই যারা প্রায়ই ভুলে যান বা মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যায় পড়েন, তাদের খাদ্যতালিকায় আখরোট যোগ করা উপকারী হতে পারে।
আখরোট ও কাঠবাদাম প্রতিদিন যে কয়টি খাওয়া উচিত-
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন ২-৪টি আখরোট খাওয়া যথেষ্ট। আখরোট যেকোনো সময় খাওয়া যায়, তবে সকালে খালি পেটে খেলে এর উপকারিতা আরও বেশি পাওয়া যায়। অন্যদিকে, কাঠবাদামের ক্ষেত্রে ৪-৬টি বাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পানিতে ভিজানোর ফলে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ আরও সহজে শরীরে শোষিত হয় এবং এর উপকারিতা দ্বিগুণ হয়।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অন্যান্য উপকারী খাবার-
আখরোট এবং কাঠবাদাম ছাড়াও আরও বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক। সেগুলো হল :
সবুজ শাকসবজি : পালংশাক, ব্রকোলি, কলমি শাক ইত্যাদি ভিটামিন কে, ফোলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কোষকে সুস্থ রাখে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
চিনাবাদাম : এতে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন ই, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
হলুদ : হলুদের কারকিউমিন উপাদান মস্তিষ্কে প্রদাহ কমায় এবং নিউরনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
বেরি জাতীয় ফল : ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা মস্তিষ্কের বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করে।
ডিম : ডিমে থাকা ভিটামিন বি৬, বি১২ এবং ফোলিক অ্যাসিড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ডার্ক চকলেট : ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
মাছ: স্যামন, টুনা জাতীয় মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ফল : কমলা, আপেল এবং অ্যাভোকাডো মস্তিষ্কের কোষকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
খাদ্যতালিকায় যেভাবে এই খাবারগুলো যোগ করবেন-
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু সহজ পরামর্শ দেওয়া হলো:
সকালের নাস্তা : সকালে একটি ফলের স্মুদিতে আখরোট বা চিনাবাদাম যোগ করুন। এছাড়া, ডিম দিয়ে তৈরি অমলেটের সঙ্গে সবুজ শাকসবজি মিশিয়ে খেতে পারেন।
দুপুরের খাবার : সালাদে ব্রকোলি, পালংশাক এবং এক মুঠো কাঠবাদাম বা আখরোট যোগ করুন।
সন্ধ্যার নাস্তা : এক টুকরো ডার্ক চকলেট বা এক মুঠো বেরি জাতীয় ফল খান।
রাতের খাবার : মাছ বা হলুদ দিয়ে রান্না করা খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
পানি পান : মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। ডিহাইড্রেশন স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম : খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
পর্যাপ্ত ঘুম : মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য আখরোট এবং কাঠবাদাম দুটিই অত্যন্ত উপকারী। তবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রার কারণে আখরোট এ ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে। এছাড়া সবুজ শাকসবজি, বেরি, ডিম, মাছ এবং ডার্ক চকলেটের মতো খাবারও নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, ব্যায়াম এবং ঘুমের সমন্বয়ে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে পারেন।
কোনও নতুন খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করার আগে বিশেষ করে যদি আপনার কোনও খাদ্য সংক্রান্ত এলার্জি বা স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এসকে//