জাতীয়

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: রিজওয়ানা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের আরও সক্রিয় হয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

শনিবার (৩১ মে) ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত ‘মেনিফেস্টো টক: ইয়ুথ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘তরুণদের উচিত লোভ, ক্ষমতার লালসা এবং দুর্নীতির প্রলোভন থেকে দূরে থেকে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করা।’

এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি ‘ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রাও ঘোষণা করেন, যা দেশের ১৬টি তরুণ নেতৃত্বাধীন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে গঠিত হয়েছে।

বায়ুদূষণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উপদেষ্টা জানান, সরকার ইতোমধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—পুরনো বাসগুলো সরিয়ে ফেলা, ইলেকট্রিক যানবাহন চালুর উদ্যোগ এবং ঢাকার আশপাশে নতুন ইটভাটা স্থাপন বন্ধ করা।

উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই ঠিকই, কিন্তু তা যেন প্রকৃতির ক্ষতি করে না হয়। জলাশয় ভরাট, পাহাড় কাটা কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।’

পলিথিন ব্যবহার বন্ধে নাগরিকদের দায়িত্বের কথা তুলে ধরে সৈয়দ রিজওয়ানা বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। বাজারে গেলে প্লাস্টিক নয়, পাট কিংবা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন।’

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও টেকসই করতে তিনি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনটি মডেল প্রকল্প চালুর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘পচনশীল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে এবং সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে হবে।’

আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ময়লার স্তূপে লাগা আগুনের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আগুন আশেপাশের মানুষের ফুসফুসের রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, যা দ্রুত সমাধান জরুরি।’

উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে পুরনো গাছ কেটে ফেলা ঠিক নয়। বন বিভাগ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর মিলে জাদুঘরের নকশা পরিবর্তন করে গাছ রক্ষার যে চেষ্টা করেছে, এটি আশার বার্তা। 

তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এগুলোর চারা রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

এসময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৩০০’র বেশি তরুণ জলবায়ু কর্মী অংশগ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও আলোচনায় যুক্ত হয়ে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি তাঁদের দলের জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে অগ্রাধিকার পাবে।

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান #পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা