ঢাকা থেকে গাইবান্ধা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পথটি পাড়ি দিলেন রাজু মিয়া। তিনি এক রিকশাচালক বাবা। যিনি শুধু একটি কারণে ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তার একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল, ঈদে ছেলের মুখে হাসি ফোটানো। এমনই এক বাবার অপ্রকাশ্য ভালোবাসার ভিডিও সামাজিক যোগাযাগোযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার তালুকজামিরা গ্রামের বাসিন্দা রাজু মিয়া। রিকশাচালক রাজু মিয়া তিন সন্তানের জনক। রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকার এক রিকশা গ্যারেজের রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। নিজের খরচের জন্য কিছুটা রেখে স্ত্রীর কাছে অল্প কিছু খরচ পাঠিয়ে দেন, যাতে পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনার খরচও চালানো যায়।
একদিন ছোট ছেলে রেদোয়ান হোসেন হৃদয় তার বাবা রাজুর কাছে আবদার করেছিল একটি সাইকেল চাই। অনেকদিন ধরে সেই স্বপ্ন চোখে ছিল ছেলের। তাই এবারের ঈদে বাবা রাজু মিয়া সিদ্ধান্ত নেন তিনি তার ছেলের এই ইচ্ছেটি পূর্ণ করবেন।
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সাইকেল কিনে দেবেন। কিন্তু প্রশ্ন ছিল, সাইকেলটি গাইবান্ধায় পৌঁছাবে কীভাবে? এই কথা ভেবে রাজু যখন সাইকেল নিয়ে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে যান তখন সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, সাইকেলসহ বাড়ি ফিরতে প্রায় ৫ হাজার টাকার ভাড়া লাগবে। যা তার পক্ষে একেবারে অসম্ভব ছিল।
কিন্তু রাজু মিয়া তার সন্তানকে খুশি করতে কি পরিমাণ কষ্ট করতে পারেন, তারই উদাহরণ তার এই অক্লান্ত কষ্ট। নিজের পকেটে টাকাও না থাকলেও তিনি একটি সাইকেল কিনে সোজা সাইকেলে চড়ে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হন। শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ফিরলেন গাইবান্ধায়।
ক্লান্তি আর শারীরিক দুর্বলতার পরও শুক্রবার রাত তিনটার দিকে রাজু মিয়া বগুড়ায় পৌঁছান। সেখানকার বগুড়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজুকে দেখে এগিয়ে আসেন। তার সাহসিকতার কথা শোনার পর তাকে বিশ্রাম এবং খাবারের ব্যবস্থা করেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় কিছুটা বিশ্রাম নেন রাজু। এরপর তাদের সহয়তায় অবশেষে শনিবার (০৭ জুন) সকালে গাইবান্ধার তালুকজামিরা গ্রামে পৌঁছান রাজু।
রাজু মিয়া তার ছেলের হাতে সাইকেল তুলে দিয়ে বলেন, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আমার ছেলের হাসিতে সব কষ্ট ভুলে গেছি। ঈদের দিন যখন সে হাসছে, তখন মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি।
এসকে//