বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিরোধে না জড়াতে পরামর্শ বেগম খালেদা জিয়ার

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, বিএনপিকে বিরোধ নয়—আলোচনার পথ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

গত ৭ জুন ঈদুল আজহার দিনে গুলশানের বাসভবন 'ফিরোজা'য় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কেন্দ্র করে কোনও ধরনের বিরোধে না জড়িয়ে, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথেই এগিয়ে যেতে হবে।

বুধবার (১১ জুন) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। 

তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপ ও সমঝোতার পথ খোলা রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ কিসের? তারা কি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি?”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন্য সদস্য বলছেন, খালেদা জিয়ার পরামর্শ হচ্ছে- নির্বাচন তারিখ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির বিরোধে যাওয়া ঠিক হবে না। কোনও সমস্যা থাকলে সেটা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  

চারদিনের সফরে এই মুহূর্তে লন্ডনে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস। আগামী ১৩ জুন সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তার। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনের তারিখের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে এই বৈঠকে। এছাড়া সংস্কার নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে বিএনপির যেসব বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও কথা হবে। তবে, সাম্প্রতিকালে চট্রগ্রাম বন্দর, মিয়ানমার সীমান্তে করিডোর দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, বৈঠকে সে বিষয়গুলো উত্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা কম; সময় থাকলে আলোচনা হতে পারে। 

দলটির নেতারা আরও বলছেন, সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য এখন মাত্র একটি জায়গায়। সরকার প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর বিএনপির দাবি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের। এখন সেটা দুই পক্ষকে ছাড় দিয়ে এক-দুই মাস এদিক-সেদিক করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিগত কয়েকটি বৈঠকে এটাই বলে আসছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সরকারের সঙ্গে যে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাগুলো নিয়ে এতদিন আলোচনা হয়েছে, সেগুলো দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই হয়েছে, আর এসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে যেকোনো সম্ভাব্য বৈঠকে এসব আলোচিত ও নীতিগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকেই প্রধান ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠককে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১০ জুন) গণমাধ্যমকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, জাতীয়ভাবে যেমন, আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতেও এই বৈঠকের গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর। এই বৈঠকটি হলে দেশের বহু জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে, পাশাপাশি নতুন একটি রাজনৈতিক গতিপথের সূচনা ঘটতে পারে।’

মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে পুরোপুরি দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে। আমরা আমাদের দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাফল্য কামনা করি।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন বিষয়টি নির্ভর করছে ড. ইউনূস ও তারেক রহমান এর উপর। তারা কীভাবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেবেন, সেটাই এখন মূল বিষয়।’

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #বিএনপি #খালেদা জিয়া #প্রধান উপদেষ্টা