গাজায় বিতরণ করা ত্রাণ সামগ্রীর আটা বস্তায় পাওয়া গেছে শক্তিশালী মাদক জাতীয় ট্যাবলেট অক্সিকোডন, যা মূলত আফিমজাত ব্যথানাশক। বিতর্কিত মার্কিন-ইসরায়েলি সহায়তায় পরিচালিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এর মাধ্যমে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছিল।
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। তারা একে ‘চরম অমানবিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি, ব্রিটিশভিত্তিক মিডল ইস্ট আই এবং ডেইলি সাবাহ—এই তিনটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, 'আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি, যারা এই ট্যাবলেটগুলো আটার বস্তার ভেতর পেয়েছেন। সম্ভবত এই মাদকদ্রব্যগুলোর কিছু অংশকে গুঁড়ো করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটার মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
মিডল ইস্ট আই বলছে, অক্সিকোডন একটি অপিওয়েড (আফিমজাতীয় ওষুধ), যা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা উপশমের কাজ করে এবং সাধারণত ক্যানসার রোগীদের এই ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়।

এই ওষুধটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা ও দৃষ্টিবিভ্রমসহ প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলতে পারে।
একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ত্রাণের আটার বস্তায় অক্সিকোডন ট্যাবলেট পাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে বিবৃতি দেয় গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।
ফিলিস্তিনি ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে 'গণহত্যার সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা ফেসবুকে এই ওষুধ সম্পর্কে পোস্ট করে বলেছেন, 'এটি আমাদের সামাজিক চেতনা নিশ্চিহ্ন করার একটি মাধ্যম।'
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, তারা মনে করে যে, আসক্তি ছড়ানো ও ফিলিস্তিনি সামাজিক কাঠামোকে ভেতর থেকে ধ্বংস করার এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েল দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোকে 'মৃত্যুফাঁদ' হিসেবে উল্লেখ করে তারা আরও বলছে, অবরোধের সুযোগ নিয়ে এই পদার্থগুলোকে 'ত্রাণ ও সহায়তা' হিসেবে পাচার করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে জিএইচএফ।

গত বুধবার ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সংস্থা জিএইচএফ'র কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলছে, এটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে দুর্বল করছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের 'জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি' ত্বরান্বিত করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে 'যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যা' হিসেবে গণ্য হতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, জিএইচএফ'র কার্যক্রম চলাকালে গত এক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে অন্তত ৫১৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
শুক্রবার হারেৎজ জানায়, ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছেন যে, তারা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে মিডল ইস্ট আইয়ের পক্ষ থেকে জিএইচএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
এসি//