গেল বছর কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কটূক্তির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই প্রেক্ষিতে রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এমনকি আহত অবস্থায় হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীরাও রেহাই পাননি এই হামলা থেকে।
২০২৪ এর ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যা দেন। এই বক্তব্যকে ঘিরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শুরু হয় বিক্ষোভ।
পরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় কার্যালয়ে বলেন, ‘তারা আত্মস্বীকৃত রাজাকার। এর জবাব ছাত্রলীগই দেবে।’
এই বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যারা রাজাকার বলে স্লোগান দিয়েছে, তাদের শেষ দেখে ছাড়বেন।’ ছাত্রলীগ সভাপতির এমন বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
১৫ জুলাই দুপুরের পর থেকেই ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের কাছে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে নারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০০ জন আহত হন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, মহানগর শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মহড়া দেয়।
শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, আহত শিক্ষার্থীরা যখন চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটেও (বর্তমান জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট) আহত শিক্ষার্থীদের ওপরও কয়েকবার হামলা করে ছাত্রলীগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। পুলিশ কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।
১৫ জুলাই রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ততা পেলেই মারধর করা হয়।
এদিন, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, যশোরে এম এম কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এছাড়াও রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও লাগে না।’
ওই রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় দেশব্যাপী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
একই দিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ ও যশোরের এম এম কলেজেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর বাইরের অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলে হামলা চালানো হয়।
এমএ//