দেশে ভিক্ষুকের অস্তিত্ব নেই বলে চাকরি হারিয়েছেন দারিদ্র্য ও ক্ষুধাপীড়িত দেশ কিউবার শ্রম ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী মার্তা এলেনা ফেইতো-কাবরেরা। দেশটির পার্লামেন্টের অধিবেশনে এমন বেফাঁস মন্তব্যের জেরে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বুধবার (১৬ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ কিউবার ওই মন্ত্রী দাবি করেন, দেশটিতে ভিক্ষুকের কোনো অস্তিত্ব নেই।
তিনি বলেন, কিউবায় প্রকৃত অর্থে ‘ভিক্ষুক’ শব্দের কোনো মানে নেই। যারা ময়লার বিন থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন, তারা এটাকে ‘সহজ উপার্জনের মাধ্যম’ হিসেবে দেখেন বলেই এমন কাজ করেন। তার এই মন্তব্যে কিউবার জনগণ ও প্রবাসী কিউবানরা সমালোচনায় ফেটে পড়েন।
সমালোচনা এতোটাই প্রবল আকার ধারণ করে যে এক পর্যায়ে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন।
এর অল্প সময় পর মার্তা এলেনা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত কিউবায় দারিদ্র্যের হার দ্রুত বাড়ছে। সঙ্গে খাদ্য সঙ্কটও নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
মার্তা এলেনা এ সপ্তাহের শুরুর দিকে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার সময় কিউবার সড়কে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ও ময়লার বিন হাতড়ে বেড়ানো মানুষদের নিয়ে ওই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, 'কিউবায় কোন ভিক্ষুক নেই। তবে এমন কিছু মানুষ আছে যারা সহজে অর্থ উপার্জন করার জন্য ভিক্ষুক সেজে থাকে।'
ময়লার বিন ঘাঁটাঘাঁটি করার বিষয়টিকে তিনি 'অবৈধ পুনর্চক্রিকরণে অংশগ্রহণ' বলে অভিহিত করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ওই মন্ত্রী ধারণা করতে পারেননি যে তার এ ধরনের মন্তব্য সবার ক্রোধের কারণ হবে। তার এই মন্তব্য দেশের নেতৃত্বকে আবেগহীন ও কতৃত্বপরায়ণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে এবং এটাই প্রমাণ করেছে যে তারা কিউবার সাধারণ জনগণের ভয়াবহ আর্থিক দুর্দশা দেখেও না দেখার ভান করছে।
মন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে কিউবার বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মী ও বুদ্ধিজীবী একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়, মার্তা এলেনার মন্তব্য 'কিউবার জনগণের জন্য অপমানজনক।'
এরপর কিউবার প্রেসিডেন্ট নিজেই মার্তা এলেনার সমালোচনা করেন। মন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে পার্লামেন্টের পরবর্তী অধিবেশনে তিনি বলেন, দেশের নেতৃত্ব এতোটা 'ঔদ্ধত্য' দেখাতে পারে না এবং জনগণের 'বাস্তবতা থেকেও বিচ্ছিন্ন' থাকতে পারে না।
ক্ষমতাসীন দল কিউবান কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকার মার্তা এলে-নার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে।
কিউবায় সরকারিভাবে ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রকাশ করা হয় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সঙ্কটে থাকা কিউবার মতো দেশে ক্রমবর্ধমান ভিক্ষুকের সংখ্যা সহজেই বোঝা যায় এবং বেশিরভাগ কিউবান তা জানেন, বোঝেন ও এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন।
এসি//