আইন-বিচার

সংশোধিত আইনে প্রথম অব্যাহতি পেলো কিশোর ফাইয়াজ

বায়ান্ন প্রতিবেদন

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (ক) ধারায় দাখিলকৃত অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে তাকে এই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। 

ঢাকার মহানগর হাকিম জি এম ফারহান ইশতিয়াক ১৫ জুলাই এ আদেশ দেন। গেল রোববার সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী। 

সাধারণত যে কোনও মামলার তদন্ত করে পুলিশ অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। গেল ১০ জুলাই সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশের ১৭৩ (ক) ধারা অনুযায়ী কোন মামলার তদন্ত চলমান অবস্থায়  অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দিতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে তাকে অব্যাহতি দিতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই অধ্যাদেশ জারির পাঁচ দিনের মধ্যে প্রথম এই আইনে অব্যাহতি পেয়েছে ওই কিশোর। 

মামলার দায় থেকে কিশোর ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে গত ১৩ জুলাই আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করে ডিএমপির গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ। তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা মো. খালিদ হোসেন এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১৫ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম জি এম ফারহান ইশতিয়াক প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে ফাইয়াজকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। বলা যায় এ আইনের প্রথম সুবিধা পেলেন কিশোর ফাইয়াজ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন ) বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এটি একটি ব্যতিক্রমী নজির। এতে হয়রানি কমবে। নির্দোষ মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন। 

সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (ক) ধারা অনুযায়ী তদন্ত চলাকালে অগ্রগতির বিষয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারবেন পুলিশ কমিশনার, জেলার এসপি বা সমমর্যাদার কোনও কর্মকর্তা। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ না পাওয়া গেলে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয়া যাবে। প্রতিবেদনে আদালত সন্তুষ্ট হলে অভিযুক্তকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মাতুয়াইল হাসপাতালের কাছে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ওই মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি ছিল ফাইয়াজ। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ফাইয়াজের বয়স তখনও ১৮ হয়নি। জন্ম নিবন্ধন অনুসারে ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সে এ প্লাস পায়। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই রাতে পুলিশ সদস্য নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) গণভবনে দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। মোটরসাইকেলে করে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজের উত্তর কাছে পৌঁছালে তাঁর ওপর হামলা হয়। তাঁকে হত্যা করে ফুট ওভারব্রিজের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। ওই ঘটনায় ২৪ জুলাই গিয়াস উদ্দিনের ভগ্নীপতি মো. ফজল প্রধান ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত অনেককে আসামী করে যাত্রাবাড়ী হত্যা মামলা করেন। 

তারপর ২৪ জুলাই রাতে সাদা পোশাকধারী একদল লোক ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই তাকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তখন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা এবং রিমান্ড মঞ্জুর নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার হয়।  

আইনজীবী আদালতে বলেছিলেন, ফাইয়াজের বয়স ১৮ হয়নি। রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন চেয়েছিলেন তিনি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাকে গাজীপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। গত বছর ৬ আগস্ট জামিনে মুক্ত হয় ফাইয়াজ। 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কিশোর ফাইয়াজ #হত্যা মামলায় #অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত