লাইফস্টাইল

বাড়ছে রক্তশূন্যতা, ঝুঁকিতে নারী, শিশু ও গর্ভবতী

লাইফস্টাইল ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দিন দিন বেড়েই চলছে এক নীরব মহামারির মত রোগ। যার নাম রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে নারী, শিশু ও গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, বর্তমানে প্রায় তিনজন নারীর একজন এবং দুই শিশুর একজন এই রোগে ভুগছেন। আমাদের বাংলাদেশেও গর্ভবতী নারীদের অর্ধেকের বেশি রক্তশূন্যতার শিকার। রক্তশূন্যতা মূলত রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা অক্সিজেন শরীরের সব কোষে পৌঁছে দেয়। এর অভাবে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

যেকারণে রক্তশূন্যতা হয় 

বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তশূন্যতার তিন প্রধান কারণ রয়েছে—

১. রক্তক্ষরণ: অতিরিক্ত মাসিক, দুর্ঘটনা, পাইলস বা যেকোনো রক্তপাত শরীর থেকে আয়রনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

২. নতুন রক্ত তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি: আয়রন, ভিটামিন B12 এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাবে রক্ত কণিকা যথাযথ পরিমাণে তৈরি হয় না।

৩. রক্তকণিকার ধ্বংস: থ্যালাসেমিয়া, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগে রক্তকণিকা ধ্বংস হয়।

বিশ্বজুড়ে আয়রনের ঘাটতি এই রোগের সবচেয়ে বড় কারণ।

লক্ষণগুলোকে চিনবেন যেভাবে 

রক্তশূন্যতার সাধারণ লক্ষণগুলো হচ্ছে—

• অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা

• মাথা ঘোরা ও চোখ ধुন্ধলা দেখা

• হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

• শ্বাসকষ্ট

• ত্বক ফ্যাকাসে ও ঠোঁট, চোখের ভেতর সাদা ভাব

• চুল পড়া এবং মনোযোগের অভাব

চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, এসব লক্ষণকে অবহেলা করলে রোগ দ্রুত জটিল রূপ নেবে।

নির্ণয় ও পরীক্ষা

রক্তশূন্যতা নির্ণয়ের জন্য প্রথমে করা হয় Complete Blood Count (CBC) পরীক্ষা। প্রয়োজন পড়লে আয়রন, ফলেট, ভিটামিন B12-এর মাত্রা এবং বোন ম্যারো পরীক্ষা করা হয়।

WHO-এর নিয়ম অনুসারে—

• পুরুষদের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক: ১৩.৫–১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার

• নারীদের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক: ১২.০–১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার

• গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ১১ গ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে হলে অ্যানিমিয়া ধরা হয়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

রক্তশূন্যতার চিকিৎসা রোগীর ধরন অনুসারে ভিন্ন:

• আয়রনের ঘাটতি থাকলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট ও আয়রনসমৃদ্ধ খাদ্য যেমন শাকসবজি, কলিজা, ডিম, মাংস, ডাল, ছোলা ও ভিটামিন C যুক্ত ফল খাওয়া জরুরি।

• ভিটামিন B12 বা ফলিক অ্যাসিডের অভাব থাকলে ইনজেকশন ও ঔষধ দেওয়া হয়।

• জেনেটিক রোগ থ্যালাসেমিয়া থাকলে রক্ত পরিবর্তন ও বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা শুধু মায়ের জন্য নয়, শিশুর জন্যও বিপদ ডেকে আনে। মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ এটি। এছাড়া জন্মের সময় শিশুর কম ওজন, জন্মের পর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এর ফলে হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্য, নিয়মিত আয়রন-ফোলেট সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, কৃমিনাশক সেবন এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা মূলমন্ত্র হওয়া দরকার।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য রোগ হলেও এর উপেক্ষা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই শরীরের অস্বাভাবিক কোনও লক্ষণ দেখা মাত্রই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। সুস্থ মানুষ, সুস্থ সমাজ—স্বাস্থ্যবান জাতিই শক্তিশালী জাতি গঠনের মন্ত্র।

সূত্র :

• World Health Organization (WHO)

• United Nations Children’s Fund (UNICEF)

• ICDDR,B

• বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এসকে//