লাইফস্টাইল

পেটে পাথর, অবহেলায় হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি

লাইফস্টাইলে ডেস্ক

আমাদের আধুনিক জীবনে খুব দ্রুত জীবনযাপন ও কাজের চাপের কারণে নিজেদের শরীরের যত্ন নেওয়া প্রায়ই ভুলে যাই। এর মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি খাওয়া এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস। বিশেষ করে পেটের স্বাস্থ্য যা আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এর প্রতি অবহেলা মারাত্মক হতে পারে। পেটে পাথর বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তারই একটি উদাহরণ।

পেটে পাথর মূলত গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যার কারণে হয়, যখন শরীরে প্রয়োজনীয় পানি বা পুষ্টির অভাব ঘটে এবং পেটের কোষে বিভিন্ন পদার্থ জমে গিয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ফলস্বরূপ হতে পারে এবং একে উপেক্ষা করলে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

কারণ - 

পেটে পাথর হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে। এগুলো প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখে এবং অবহেলা হলে সমস্যাটি গুরুতর হতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার: 

অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, ফাস্টফুডের প্রতি আসক্তি বা স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাব পেটের সমস্যার মূল কারণ হতে পারে।

পানি কম খাওয়া: 

পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে আরও তীব্র করে তোলে এবং পেটে পাথর জমতে সাহায্য করে।

স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ: 

শারীরিক নয়, মানসিক চাপও পেটের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকা, যেমন কাজের চাপ বা পারিবারিক সমস্যায় মনোযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা, গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল: 

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল শরীরের হজম ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং পেটের মধ্যে অতিরিক্ত অ্যাসিড জমে গ্যাস্ট্রিক পাথর তৈরি হতে পারে।

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস: 

অনিয়মিত সময়ে খাবার খাওয়া, দ্রুত খাবার খাওয়া বা রাতে খাওয়া এগুলো পেটের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

লক্ষণ -

পেটে পাথরের সমস্যা খুব সাধারণ হলেও এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে যেগুলি সাবধান হওয়ার সংকেত।

পেটের ব্যথা: 

পেটে ভারি বা তীব্র ব্যথা অনুভব করা বিশেষ করে খাওয়ার পর বা সকালবেলায়।

গ্যাস এবং অস্বস্তি: 

পেটে গ্যাস জমা হওয়া এবং এর ফলে অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়া।

অতিরিক্ত অ্যাসিড: 

খাবারের পর পেটের অ্যাসিডি বা বুকজ্বালা অনুভব করা।

বমি বা পেটফাঁপা: 

অনেক সময় পেটে পাথর থাকার কারণে বমি আসা বা পেট ফাঁপা হয়ে যেতে পারে।

প্রভাব - 

পেটে পাথরের সমস্যাটি অবহেলা করা খুব বিপজ্জনক হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী এই সমস্যা বিভিন্ন ধরনের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে:

গ্যাস্ট্রিক আলসার: 

দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণে পেটের দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্ম দেয়।

ইউটিআই (Urinary Tract Infection): 

অপর্যাপ্ত পানি খাওয়ার কারণে মূত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়া জমে যেতে পারে, যার ফলে ইউটিআই সংক্রমণ সৃষ্টি হতে পারে। এটি জরায়ু ও অন্যান্য অঙ্গের সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

মাসিক সমস্যা: 

পানির অভাব ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণে নারীদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মাসিক চক্রের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

শরীরের দুর্বলতা: 

পানি ও পুষ্টির অভাব শরীরের শক্তি কমিয়ে দেয়, যার ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভূত হয়।

প্রতিরোধের উপায় - 

পেটে পাথর থেকে মুক্তি পাওয়া বা এর প্রভাব কমানোর জন্য কিছু সহজ অভ্যাস ও সতর্কতা প্রয়োজন:

পর্যাপ্ত পানি খাওয়া: 

প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া নিশ্চিত করুন। এটি শরীরের টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

সুস্থ খাবার খাওয়া: 

তেল ও মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করে, শাকসবজি, ফলমূল এবং হালকা খাবার খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করুন।

প্রতিদিন ব্যায়াম: 

নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন হাঁটাচলা বা হালকা যোগব্যায়াম, পেটের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে।

স্ট্রেস কমানো: 

মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত বিশ্রাম নিন এবং ধ্যান বা শখের কাজে মনোযোগ দিন। এটি আপনার শরীরকে সচল রাখবে।

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পরিবর্তন: 

খাবার সময় নির্দিষ্ট করুন, দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখুন।

পরামর্শ - 

যদি পেটে পাথরের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় এবং বাড়তে থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বেশিরভাগ সময়, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং কিছু সাধারণ ওষুধ পেটের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে, গুরুতর সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

পেটে পাথরের সমস্যা যতোটা সাধারণ মনে হতে পারে, এর মারাত্মক প্রভাব শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও পড়তে পারে। তাই পেটের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা খুব জরুরি। সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রায় কিছু সহজ পরিবর্তন করে আমরা পেটে পাথরসহ অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারি।

সূত্র :

১. গ্যাস্ট্রিক এবং পেটের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়

২. ডাক্তারদের পরামর্শ

৩. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)

এসকে//  

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #খাদ্যাভ্যাস #পেটে পাথর