আজ ৪৭ বছরে পা রেখেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির রয়েছে আত্মত্যাগের, প্রতিরোধের এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর এক দীর্ঘ সাহসী অভিযাত্রার ইতিহাস। বাংলাদেশে যখনই অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে, গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হয়েছে দলটি তখনই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জোরালো ভূমিকা রেখেছে।
১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি করা হয়েছিলো। সেই শূন্যতা পূরণে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি গঠন করা হয়েছিলো। ঢাকার রমনা বটমূলে এই দল গঠন করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীনতার ঘোষক তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া ও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে নানা কর্মসূচির কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল সমৃদ্ধ দেশ গঠনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শহীদ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং দূরদর্শী বিভিন্ন কর্মসূচি দেশবাসীর কাছে তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে।
কিন্তু অপরাজনীতির কুশীলবদের নির্দেশনায় ১৯৮১-র ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য তাকে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে দলের কাণ্ডারি হন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। গৃহবধু থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বে বিএনপি ফিরে পায় নতুন দিশা। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব স্বৈরাচার এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করে। বেগম জিয়ার বাস্তববাদী ও আপোষহীন নেতৃত্বে বিএনপির পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার তৈরি হয়। জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পায় বিএনপি।বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীকে আরো দুইবার খালেদা জিয়া আরো জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান।
কর্তৃত্বপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির কথিত মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালে কারাগারে নেয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের হাল ধরেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। দলকে সুসংগঠিত করা, আন্দোলনে গতি আনা এবং রাজনীতিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করাসহ নতুন নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে বর্তমানে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দলকে।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,'জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাসহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য।'
তিনি আরো বলেন, 'জাতীয়তাবাদী আদর্শের সাথে জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। দিনটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। দলটি বাংলাদেশি ভূখণ্ডের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।'
প্রায় পাঁচ দশক ধরে পথ চলা বিএনপির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে, গেল ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক নতুন সমীকরণ। তাই গতানুগতিক রাজনীতি থেকে দলটি এবার বেরিয়ে আসতে চাইছে ।
দলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ ও পরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক শূন্যতা অনুভব করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি শুধু বহুমতের গণতন্ত্রই প্রতিষ্ঠা করেননি, বরং বাংলাদেশকে মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। আজ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশের মানুষ আজ বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর কারণ হল- বিএনপিই একমাত্র দল যারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম। তাই আজকে আমরা শপথ নিয়েছি, যে বাধাই আসুক, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাবো। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে তাকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গণতন্ত্রকামী সকল দলকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দিনে বিএনপিকে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। কাজের মাধ্যমেপ্রমাণ করতে হবে বিগত দিনে দেওয়া ৩১ দফা রূপরেখা কথার কথা নয়। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে আবারো চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে দলটি।
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেছেন, ‘দিন বদলেছে, বদলেছে প্রেক্ষাপটও। তাই বিএনপির বিরোধী দল থাকা অবস্থায় তাদের যে প্রতিশ্রুতি ছিলো তা ক্ষমতায় গেলে কতটুকু বাস্তবায়ন করবে সেদিকে তাকিয়ে আছে জনগণ।সবনেতাকর্মীকে জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করে পথ চলতে হবে।’