আন্তর্জাতিক

গাজায় হত্যাযজ্ঞের দুই বছর আজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে দখলদার ইসরাইল। সেই আক্রমণ আজও অব্যাহত রয়েছে, আর এতে এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ।

শুধু বিমান ও স্থল হামলাতেই নয়, হামলার প্রথম দিন থেকেই উপত্যকাটিকে অবরোধ করে রেখেছে ইসরাইল। এর ফলে ত্রাণ ও খাদ্য ঘাটতির মধ্যে চরম দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজার লাখো বাসিন্দা। দুই বছরের অব্যাহত আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো অঞ্চলটি।

চাথাম হাউসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বলেন, “গত দুই বছর ধরে গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। যদিও তারা আসলে কী অর্জন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একদিকে ইরান-সমর্থিত প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের সক্ষমতা কিছুটা কমেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অঙ্গনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তেল আবিব।”

ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে—এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ইসরাইল গাজায় “জাতিগত নিধন” বা জেনোসাইড চালাচ্ছে।

সানাম ভাকিল বলেন, “গাজায় গণহত্যার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভয়াবহ আঘাত হেনেছে। এমন এক পরিকল্পিত জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।”

এই আগ্রাসনের প্রভাব শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের কারণে ইরান, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও কাতারেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলি আগ্রাসনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এক বিস্তারিত তথ্যপত্র প্রকাশ করেছে। এতে ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটি জানায়, ইসরাইলি  হামলায় গাজাজুড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহত হয়েছেন ইউএনআরডব্লিউএর ৩৭০ জনেরও বেশি সদস্য।

এছাড়া ৯৮ শতাংশেরও বেশি কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গেছে, ৯০ শতাংশ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পাঁচ লাখ নারী মাসিক স্বাস্থ্যবিধির উপকরণের অভাবে ভুগছেন, ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে সাবানের মতো ন্যূনতম স্বাস্থ্যসামগ্রী নেই।

শিক্ষাক্ষেত্রেও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। ছয় লাখ ৬০ হাজার শিশু টানা তিন বছর ধরে স্কুলের বাইরে রয়েছে। ৯২ শতাংশ স্কুল ভবনের পুনর্গঠন প্রয়োজন, আর জাতিসংঘ পরিচালিত ৯০ শতাংশ স্কুল ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুই বছর পেরিয়ে গেলেও গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের কোনো ইতি দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা, গভীর হচ্ছে মানবিক সংকট।

সূত্র: আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি 

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #গাজা #ইসরাইল