সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের শহর নয়ডা। গেলো মে মাসে শহরটির একটি কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউতে দেখা হয় রামকেশ মীনা (৩২) এবং অমৃতা চৌহানের (২১)। প্রথম দেখাতেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতার পর তারা কফি ডেটে যান, নম্বর বিনিময় করেন এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন।
কয়েক মাসের মধ্যেই আগস্টে, ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে তারা দিল্লিতে এক ফ্ল্যাটে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে, এমনকি তারা একে অপরের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও করতেন। কিন্তু তারা কখনও ভাবেননি যে এই ভিডিওগুলো ভবিষ্যতে ব্ল্যাকমেইলের সরঞ্জাম হয়ে উঠতে পারে।
সমস্যার সূত্রপাত ঘটে সেপ্টেম্বরে, যখন অমৃতার জীবনে পুনরায় প্রবেশ করেন তার প্রাক্তন প্রেমিক সুমিত কাশ্যপ, যিনি একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ কোম্পানিতে কাজ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অমৃতা ও সুমিত পূর্বে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে আবার ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়। এ সময় রামকেশ ধীরে ধীরে অমৃতার জীবনে দূরে সরে যান। অন্যদিকে, অমৃতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতে দেখা যায়, সে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও রিলস তৈরি ও শেয়ার করছিল। এবং সুমিতের সঙ্গে চত্তরপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে চলে যান।
এই পরিস্থিতিতে রামকেশ, অমৃতাকে ফিরে পাওয়ার এবং তাদের পুরনো সম্পর্কের স্মৃতি মনে করানোর উদ্দেশ্যে, তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওগুলো পাঠানো শুরু করেন। তবে এই ভিডিওগুলো অমৃতার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ক্রোধে অমৃতা রামকেশকে হুমকি দেন এবং ভিডিও মুছে ফেলার জন্য হার্ড ডিস্কটি দাবি করেন। রামকেশ তা দিতে অস্বীকার করেন।
পুলিশ জানায়, এরপরই সুমিত তার বন্ধু সন্দীপ কুমারকে সঙ্গে নিয়ে রামকেশের তিমারপুর ফ্ল্যাটে ঢুকে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করার পরিকল্পনা করেন।
৬ অক্টোবর, মুখোশধারী সুমিত ও সন্দীপ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। সংঘর্ষের সময় রামকেশ মারা যান। পরে এই ঘটনাকে আগুনের দুর্ঘটনা মনে করানোর জন্য ফরেনসিকের শিক্ষার্থী অমৃতার পরামর্শে ঘি, তেল ও ওয়াইন ব্যবহার করে ফ্ল্যাটে আগুন ধরান এবং গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে আগুন আরও বিস্তৃত করেন।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করেছিলেন, এটি এসি বিস্ফোরণের কারণে ঘটেছে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল লোকেশন বিশ্লেষণ এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত পদক্ষেপে দোষীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। বর্তমানে তিনজনেই জেলে রয়েছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসি//