আর্কাইভ থেকে এশিয়া

প্রতিরাতেই উইঘুর নারীদের তুলে নিয়ে একাধিক চীনা পুরুষ ধর্ষণ করতো

প্রতিরাতেই উইঘুর নারীদের তুলে নিয়ে একাধিক চীনা পুরুষ ধর্ষণ করতো

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের জন্য যেসব 'পুনঃশিক্ষণ' কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে- তাতে নারীরা পরিকল্পিতভবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন বলে নতুন পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছে বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেনটি তুলে ধরা হলো-

এই নারীদের একজন হচ্ছেন তুরসুনে জিয়াউদুন। বিবিসিকে দেয়া তার এই বর্ণনা কোন কোন পাঠককে বিচলিত করতে পারে।

তুরসুনে জিয়াউদুন জানান, ‘তখন কোন মহামারি চলছিল না কিন্তু ওই লোকগুলো সবসময়ই মুখোশ পরে থাকতো’।

তিনি জানান, তারা স্যুট পরতো, পুলিশের পোশাক নয়। কখনো কখনো তারা আসতো মধ্যরাতের পরে। সেলের মধ্যে এসে তারা ইচ্ছেমত কোন একজন নারীকে বেছে নিতো। তাদের নিয়ে যাওয়া হতো করিডোরের আরেক মাথায় 'কালো ঘর' বলে একটি কক্ষে। ওই ঘরটিতে নজরদারির জন্য কোন ক্যামেরা ছিল না।

জিয়াউদুন বলেন, বেশ কয়েক রাতে তাকে এভাবেই নিয়ে গিয়েছিল ওরা। হয়তো এটি আমার জীবনে এমন এক কলঙ্ক - যা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। এসব কথা আমার মুখ দিয়ে বের হোক - এটাও আমি কখনো চাইনি।

শিনজিয়াং প্রদেশে চীনের এইসব গোপন বন্দীশিবিরের একটিতে তুরসুনে জিয়াউদুন বাস করেছেন মোট ৯ মাস।

তিনি বলছেন, ওই সেলগুলো থেকে প্রতিরাতে নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, তার পর মুখোশ পরা এক বা একাধিক চীনা পুরুষ তাদের ধর্ষণ করতো।

জিয়াউদুন বলেন - তিনি নিজে তিনবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিবারই দুই বা তিন জন লোক মিলে এ কাজ করে।

এসব বন্দীশিবিরে কোন কোন অনুমান অনুযায়ী ১০ লাখেরও বেশি নারী পুরুষকে রাখা হয়েছে। চীনের বক্তব্য, উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের পুনঃশিক্ষণের জন্যই এসব শিবির।

উত্তর পশ্চিম চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের তুর্কিক মুসলিম সংখ্যালঘু এই উইঘুরদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ।

তুরসুনে জিয়াউদুন এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। শিনজিয়াং থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রথম কিছুকাল তিনি ছিলেন কাজাখস্তানে।

সেখানে তিনি সার্বক্ষণিক ভয়ের মধ্যে ছিলেন যে তাকে বোধহয় আবার চীনে ফেরত পাঠানো হবে।

তার মনে হতো, তিনি বন্দীশিবিরে যে পরিমাণ যৌন নির্যাতন দেখেছেন ও তার শিকার হয়েছেন - সে কাহিনি সংবাদমাধ্যমকে বললে তাকে শিনজিয়াং ফেরত পাঠানোর পর আরো নির্যাতনের শিকার হতো হতো।

তার ওপর এসব ঘটনা বর্ণনা করাও ছিল একটা লজ্জার বিষয়।

জিয়াউদুন যা বলছেন - তা পুরোপুরি যাচাই করা অসম্ভব, কারণ চীনে রিপোর্টারদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

তবে তার বর্ণনার খুঁটিনাটির সাথে শিনজিয়াং বন্দীশিবির সম্পর্কে বিবিসির হাতে থাকা অন্যান্য তথ্য ও বর্ণনা মিলে যায়।

শিনিজিয়াংএর বন্দী শিবিরে ১৮ মাস ছিলেন, এমন আরো একজনের সাথে বিবিসির কথা হয়েছে। তিনি হচ্ছেন কাজাখ নারী গুলজিরা আউয়েলখান।

তাকে বাধ্য করা হয়েছিল উইঘুর নারীদের কাপড় খুলে তাদের উলঙ্গ করতে, এবং তারপর তাদের হাতকড়া লাগাতে।

তার পর তিনি ওই নারীদের একটি ঘরে রেখে যেতেন - যেখানে থাকতো কয়েকজন চীনা পুরুষ। পরে, তার কাজ ছিল ঘরটা পরিষ্কার করা।

আমার কাজ ছিল ওই মেয়েদের কোমর পর্যন্ত কাপড়চোপড় খোলা এবং এমনভাবে হাতকড়া লাগানো যাতে তারা নড়তে না পারে। তাদের ঘরে রেখে আমি বেরিয়ে যেতাম।

তার পর সেই ঘরে একজন পুরুষ ঢুকতো। সাধারণত বাইরে থেকে আসা কোন চীনা লোক, বা পুলিশ। আমি দরজার পাশে নিরবে বসে থাকতাম। লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমি ওই নারীটিকে স্নান করাতে নিয়ে যেতাম।

গুলজিরা বলছিলেন, "বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ও কমবয়স্ক মেয়েদের পাবার জন চীনা পুরুষরা টাকাপয়সা দিতো।"

এতে বাধা দেয়া বা হস্তক্ষেপ করার কোন ক্ষমতা তার ছিল না্। কিছু সাবেক বন্দীকেও বাধ্য করা হতো প্রহরীদের সাহায্য করতে। সেখানে পরিকল্পিত ধর্ষণের ব্যবস্থা ছিল কিনা প্রশ্ন করে গুলজিরা আওয়েলখান বলেন, "হ্যাঁ, ধর্ষণ।"

ক্যাম্পে শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়া আরেক নারী সায়রাগুল সাউৎবে বিবিসিকে বলেন, ধর্ষণ ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। রক্ষীরা যাকে চাইতো, তাকেই তুলে নিয়ে যেতো।

তিনি বলেন, তিনি একটি ভয়াবহ ও প্রকাশ্য গণধর্ষণের ঘটনা দেখেছেন। "একটি ২০-২১ বছরের মেয়েকে ১০০ জন বন্দীর সামনে নিয়ে আসা হয়, তাদের বাধ্য করা হয় স্বীকারোক্তি দিতে। এবং তার পর পুলিশ পালাক্রমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে সবার সামনে। সে সময় তারা অন্য বন্দীদের ওপর নজর রাখছিল। তাদের কেউ বাধা দেবার চেষ্টা করলে, চোখ বন্ধ করলে, অন্যদিকে তাকালে, বা হাতের মুঠি শক্ত করলেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল শাস্তি দেবার জন্য।"

সায়রাগুল বলেন, "মেয়েটির চিৎকার শুনে আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি মরে যাচ্ছি।"

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, চীনা সরকার উইঘুরদের ধর্মীয় ও অন্য স্বাধীনতার ক্রমে ক্রমে হরণ করেছে এবং গণ-নজরদারি, বন্দীত্ব, মগজ ধোলাই এবং জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ পর্যন্ত করানোর এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই নীতির উদগাতা। ২০১৪ সালে উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চালানো এক সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি শিনজিয়াং সফর করেছিলেন।

এর পরপরই - মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের পাওয়া গোপন দলিল অনুযায়ী - তিনি স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যে এর জবাবে ব্যবস্থা নেবার সময় 'কোন রকম দয়ামায়া দেখানো চলবে না।’

মার্কিন সরকার গত মাসে বলেছে, শিনজিয়াংএ চীনের এসব কর্মকাণ্ড গণহত্যার শামিল।

চীন একে "মিথ্যা ও উদ্ভট অভিযোগ" বলে বর্ণনা করেছে।

এসব বন্দীশিবিরের ভেতর থেকে বাসিন্দাদের কারও বক্তব্য খুবই দুর্লভ। তবে সাবেক বন্দী ও প্রহরীদের বেশ কয়েকজন বিবিসিকে বলেছেন, তারা পরিকল্পিত গণধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন বা এর প্রমাণ পেয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রতিরাতেই | উইঘুর | নারীদের | তুলে | নিয়ে | একাধিক | চীনা | পুরুষ | ধর্ষণ | করতো