আইন-বিচার

আজ প্রধান বিচারপতি অভিভাষণে বিচার বিভাগের রোডম্যাপ তুলে ধরবেন

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ আজ দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ প্রদান করবেন। প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি রোডম্যাপ তুলে ধরবেন।

আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে অভিভাষণ অনুষ্ঠানে দেশের অধস্তন আদালতের প্রায় দুই হাজার বিচারক অংশগ্রহণ করবেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারপতি ছাড়াও বিচার বিভাগ সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন।

এতে তিনি গত ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রদত্ত তার অভিষেক ভাষণে উল্লেখিত বিচার বিভাগ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়সহ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করবেন।

অভিভাষণ অনুষ্ঠানে দেশের সব বিচারককে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে গেলো ৩ সেপ্টেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৩ হতে একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়।

ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, দেশের সব আদালতসমূহে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মনোনীত একজন করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়ে দেশের অধস্তন আদালতের অন্য সব বিচারককে ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য দেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রদত্ত অভিভাষণ অনুষ্ঠানে আবশ্যিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসন শাখা থেকে ৪ সেপ্টেম্বর উক্ত অভিভাষণ অনুষ্ঠানে অধস্তন আদালতের বিচারকদের অংশগ্রহণের নিমিত্ত নির্ধারিত ওয়েবসাইটে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

৪০ লাখ মামলার ভারে ন্যুজ্ব বিচার বিভাগ। বিপুল সংখ্যক এই মামলা নিষ্পত্তির ভার অধস্তন আদালতের প্রায় দুই হাজার বিচারকের উপর। শুধু বিচারক সংকটই নয়, রয়েছে এজলাসের স্বল্পতা। এজলাস ও বিচারক সংকটের কারণে স্বল্প সময়ে বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচার নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রয়েছে কোর্ট স্টাফের সংকট। এখনো অনেক আদালতে নেই স্টেনোগ্রাফার। ফলে সাক্ষ্যগ্রহণ গ্রহণ থেকে শুরু করে রায় ও আদেশ হাতে লিখতে হচ্ছে বিচারকদের। নষ্ট হচ্ছে বিচারিক কর্মঘণ্টা। যার প্রভাব পড়ছে মামলার নিষ্পত্তির হারে।

এছাড়া নতুন আইন প্রণয়ন করা হলেও সেই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য নতুন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করা হয়নি। ওইসব আইনের মামলার বিচারের ভার পড়ছে অন্য মামলার বিচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকদের উপর। ফলে নানা সংকট ও সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জেলা পর্যায়ের আদালত ও এর বিচারকরা। দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত থাকা এসব সংকট নিরসনে বারবার দাবি জানিয়ে আসছেন বিচারকরা। কিন্তু সেসব সমস্যার প্রতিকার মেলেছে খুবই কম।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের অধস্তন আদালতের সব পর্যায়ের বিচারকদের উদ্দেশ্যে অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি। ঘোষণা করবেন বিচার বিভাগের রোডম্যাপ।

প্রসঙ্গত, বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয় বিচার বিভাগ। পৃথকীকরণের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যম ৩৯৪ জন সহকারী জজ নিয়োগ করা হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। গত ১৬ বছরে দেশ শাসনের দায়িত্বে থাকলেও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা করেনি বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয়। ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির নিয়ন্ত্রণ ছিল একচ্ছত্রভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে। শুধু সুপ্রিম কোর্ট থেকে নেয়া হত পরামর্শ।

বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিচারকদের পদায়ন, বদলি ও পদোন্নতির বিষয়টি পৃথক সচিবালয় করে সুপ্রিম কোর্টের হাতে রাখা উচিত। এটা করা সম্ভব হলে বিচারকদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠার সুযোগ কম থাকবে।

 

জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন প্রধান বিচারপতি