আর্কাইভ থেকে জাতীয়

ধুসর বালুচরে সবুজ ও হলুদের আস্তরন ক্ষেতের মাঝ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন মেঠোপথ

ধুসর বালুচরে সবুজ ও হলুদের আস্তরন ক্ষেতের মাঝ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন মেঠোপথ

বালুকাময় বিস্তৃর্ণ জমি। বন্যা পরবর্তী সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে বাদাম, তিল, সুর্যমূখী, সরিষা, মাষকালাই ও খেসারী ডালের।

এতে সবুজে প্রাণের সমাহার ঘটেছে ধুসর এ বালুচরে। এই শীতে সয়াবিন, সরিষা, তিল ও সুর্যমুখীর হলুদ ফুলে বালুকাময় সে চরা ল সেজেছে এক অনন্য সাজে। চরের এ দৃশ্য উপভোগে নুনখাওয়া বাজার থেকে নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে ওই ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ চরা লে যাত্রা। সেখানে চর উত্তর ও দক্ষিণ সারিসুরি, চর পাটতলা, মাঝেরচর, চর কাপনা, চর নুনখাওয়া, চর বারোবিশ, ব্যাপারীর চর, চর ফকিরগঞ্জ, চর ধরকা ও কালিকাপুর চর।

এই চরগুলোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। বিস্তৃর্ণ এ চরা লে গিয়ে বিষ্মিত আমরা।

চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই সবুজের সমারহ। মাঠের পর মাঠ শুধু মাষকালাই ক্ষেত। আর কয়েকদিন পরে কৃষকের ঘরে উঠবে সেগুলো। নদী অববাহিকায় চাষ করেছেন তিল, সুর্যমূখী, সয়াবিন ও সরিষার।

সেখানেই ছিটিয়েছেন খেসারী ডাল। হলুদ ফুলের নিচে ধীরে ধীরে ডালপালা মেলছে খেসারী ডালের গাছ। তিল, সুর্যমুখী, সয়াবিন ও সরিষার পরেই সে ডাল তারা ঘরে তুলবেন। সেখানে অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গা অথবা শাখা নদীতে জমে থাকা জলে কেউ কেউ রোপন করছেন ধানের চারা।

মাঝের চরের বাসিন্দা জিয়ারুল ইসলাম, আশরাফুল, জয়নাল, সবুজ মিয়াসহ একাধিক চরের অনেকেই জানান, আগে এমনিতেই পড়ে থাকত তাদের বালুকাময় এ জমিগুলো। পরে পরীক্ষামুলক চাষাবাদে কিছুটা আশার হওয়ায় তারা এক-দুই চাষ করে ছিটিয়েছেন মাষকালাই। এতে খরচ কম তাই ফসল যা আসে তাতেই পোষায়।

অন্যান্য ফসলও তারা এভাবেই লাগান। তবে অন্যান্য ফসলে পরিচর্যা দরকার হলেও তারা তেমনটা করেন না। কারন মাটি শুষ্ক সেচে অনেক খরচ। বিনা সেচে কিছু গাছ মরে গিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা থেকে যা আসে তাতেই তারা খুশি। এখানে নির্দিষ্ট সড়ক পথ নেই।

পায়ে হেটে ধুসর বালুচর পাড়ি দিয়ে তাদের এক চর থেকে যেতে হয় অন্য চরের বসতিতে। সবুজ ক্ষেতের মাঝ দিয়ে ক্রমাগত যাতাযাতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মেঠোপথ। দুপাশে সবুজ কালাই ক্ষেত অথবা হলুদ ফুলের মাঝ দিয়ে সর্পিলাকারে বয়ে চলা সে সে দৃষ্টিনন্দন মেঠোপখ ধরেই প্রতিনিয়ত অনন্ত যাতাযাত অসংখ্য মানুষের। তাদের সবগুলো পথ এসে মিশেছে ব্রহ্মপুত্র তীরে চর সারিসুরিতে।

নুনখাওয়া ইউনিয়নের ওই চরা লের মানুষ ছাড়াও এই পথে যাতায়াত করে পার্শ্ববর্তী নারায়ানপুর ইউনিয়নের চর নারায়ানপুর, চর মিরকামারী, পদ্মারচর, চর উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকঢহর, কাজীরচর, চর ডুমুরদহ, কালারচর, চর মাঝিয়ালী, ভেরামারার চর, বাঘমারা, মদনেরচর, সিন্নিখাওয়ার চর ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতিপুরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সবুজ মাঠ পেরিয়ে সয়াবিন ক্ষেতের মাঝ দিয়ে মন ভালো করা হলুদ ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে সে পথে নদের ঘাটে পৌঁছায় তারাসহ প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।

তৃপ্ত মনে নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করে নদরে তীরে গড়ে ওঠা নুনখাওয়া বাজারে।

ছোট এ বাজারেই তাদের সব রকমের সওদা। সেখান থেকে সড়ক পথে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে। এদিন সর্পিলাকার মেঠোপথ দিয়ে কাছাকাছি কয়েকটি চর ঘুরে সবুজ মাঠ ও হলুদ ফুলের সৌন্দর্য্য অবলোকন করে চরের যাত্রীদের সাথে আমরাও সে বাজারে।

দেখা সাবেক চেয়ারম্যান শাহাজালাল হোসেনের সাথে। তিনি জানালেন এই চরের পুর্বাপর কথা। অল্প কিছুদিন হল ধুসর বালুচরে ফসল ফলাবার চেষ্টা করছে এ এলাকার মানুষ।

মৃতপ্রায় শাখা নদীগুলোতে তরা লাগাচ্ছে ধানের চারা। বন্যায় পলি জমেছে এমন বালু চরে হালচাষ করে তারা ছিটিয়ে দিচ্ছে সয়াবিন, সুর্যমুখী, সরিষা, তিল, মাষকালাই ও খেসারী ডাল। পানির অভাবে শুষ্কতায় কিছু চারা মরে গেলেও অবশিষ্ট ক্ষেত আশা জাগাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাজেন্দ্র নাথ রায় জানান, চরা লের এ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারীভাবে এবারে ৮শত জন কৃষককে সুর্যমূখী, ৯৯০ জনকে চিনাবাদাম, ১হাজার জনকে খেসারী ও ১হাজার জন কৃষককে মসুর ডালের বীজ-সার দেয়া হয়েছে। তাদের দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হলে চরা লে এগুলোর চাষ আরো বাড়বে।

কারন এগুলো ফসল চরা লেই ভাল ফলে।

এস মুন্নী

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ধুসর | বালুচরে | সবুজ | ও | হলুদের | আস্তরন | ক্ষেতের | মাঝ | দিয়ে | দৃষ্টিনন্দন | মেঠোপথ