আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

ঈদে বাস না চললেও দুর্ঘটনায় নিহত ৩৩১

ঈদে বাস না চললেও দুর্ঘটনায় নিহত ৩৩১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যান চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপিত থাকলেও ঈদযাত্রায় ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩১৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ৩২৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৬২২ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় শীর্ষে আছে মোটর সাইকেল।  

আজ রোববার (২৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেখানেই এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।   

যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও গণপরিহন বন্ধ থাকার সুযোগে সড়কে ব্যক্তিগত যান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যানে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহাণি দুটোই বেড়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঈদের ছুটি শুরুর দিন ৭ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২১ মে পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছেন। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২টি ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। নৌ-পথে ৩টি দুর্ঘটনার ৬ জন নিহত ও ১০০ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে যৌথভাবে ১২৩টি দুর্ঘটনায় ৩৩১ জন নিহত ও ৭২২ জন আহত হয়েছে। অথচ দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে লকডাউনের মতো কঠিন কর্মসূচি ও বিপুল অর্থ খরচ করে ও বিশাল কর্মযজ্ঞের পরও করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ৫১৪ জনের মধ্যে সীমিত রাখতে সক্ষম হয়েছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সমসংখ্যক প্রাণহাণি ও ক্ষয়ক্ষতি হলেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোনো কর্মসূচি বা অর্থ বরাদ্দের লেশমাত্র ছিল না।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত, ১৯৯ জন আহত হয়েছেন; যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, নিহতের ৪৩ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং আহতের ৩১.৯৯ শতাংশ প্রায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩১ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন র‌্যাব সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২ জন বিজিবি, ৩৫ জন নারী, ৩৩ জন চিকিৎসক, ২২ জন শিশু ১৩ জন শিক্ষার্থী, ৩৭ জন শিক্ষক, ৯৬ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, একজন প্রকৌশলী, ৬৯ জন পথচারী ও ২ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন। 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ছয় বছরের মধ্যে এবারই ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সংগঠনটির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১২১ জন, ২০১৭ সালে ২০৫ জন, ২০১৮ সালে ২৭৭ জন, ২০১৯ সালে ২৩২ জন, ২০২০ সালে ১৪৯ জন মারা যান। 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরা বলেন, লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও মানুষের যাতায়াত সীমিত থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের যাতায়াতে এত বেশি সংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। 

এসময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৭ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয় যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে। সুপারিশগুলো হলো- 
• জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা 
• দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া এবং যানবাহনের ত্রুটি সারানোর উদ্যোগ নেওয়া 
• ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা 
• সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা 
• সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা এবং ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ রোধ করা 
• গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা 
• মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা।

শুভ মাহফুজ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ঈদে | বাস | চললেও | দুর্ঘটনায় | নিহত | ৩৩১