ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ নিয়ে সোমবার উপকূলীয় এলাকাসহ গোটা দেশের মানুষের দিন কেটেছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে। এর মধ্যে হঠাৎ কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জনমানবহীন একটি বিশাল আকারের জাহাজ আসার খবর নিয়ে হইচই শুরু হয়। গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রকাশ করা হয় খবর। হঠাৎ এমন করে লোকজন ছাড়া কীভাবে জাহাজটি চলে এসেছে তা এখনো অজানা। ফলে ‘ভুতুড়ে’ জাহাজটি নিয়ে কৌতূহল বেড়েই চলছে।
তবে নানা মাধ্যমের তথ্য বলছে, জাহাজটি সিঙ্গাপুরের৷ দানব আকৃতির জাহাজটির গায়ে ‘এম আর ৩৩২২’ লেখা রয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরে একাধিকবার এসেছে বলেও তথ্য মিলছে।
বিবিসি বাংলার খবর বলছে, নৌযানটি যে নাবিকরাই বাংলাদেশে এনেছিল তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, সোমবার বেলা আনুমানিক ১২টায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে জাহাজটিকে ভিড়তে দেখা যায়।
তাদের ধারণা, সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে ভেসে ‘পরিত্যক্ত’ এই জাহাজটি সেন্টমার্টিন দ্বীপে এসেছে। কিন্তু এটি কেন পরিত্যক্ত করা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর তারাও খুঁজছে।
উৎসুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জাহাজের রশি বেয়ে উপরে উঠে কোনো মানুষ দেখতে পাননি। তবে ভেতরে কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পেয়েছেন।
জাহাজটির গায়ে ‘এম আর ৩৩২২’ নাম লেখা রয়েছে। এর সূত্র ধরে জানা যায় এটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি বার্জ। মেরিনা টোয়েজ প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানায় নিবন্ধনকৃত এ জাহাজটি ১১০.৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০ মিটার চওড়া একটি মালবাহী বার্জ।
বার্জ হলো মালবাহী একটি নৌযান যেটিকে অন্য কোনো নৌযান বা টাগবোট দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। বার্জের সাধারণত নিজস্ব ইঞ্জিন থাকে না।
চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজগুলোর যে তালিকা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করে তা থেকে দেখা যায় এই নৌযানটি এবছরেই একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছে।
এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বরের একটি তালিকাতেও জাহাজটির কথা উল্লেখ রয়েছে, যেখানে বলা হয় বার্জটি মালয়েশিয়ার একটি বন্দর থেকে নয় হাজার টনের বেশি পাথর বহন করে এনেছে।
জাহাজটির নিবন্ধনের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে তৈরি করা এই বার্জটি ১০ হাজার টন মালামাল বহনে সক্ষম।
বার্জটি এসেছিল কুতুবদিয়ায়
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তালিকা থেকে জানা যায়, জার ওয়ার্ল্ড লজিস্টিকস নামে একটি স্থানীয় এজেন্ট জাহাজটি ভাড়া করে এনেছিল।
প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে এই জাহাজটি তারা ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু বার্জটি কীভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভিড়ল এ নিয়ে তারা কিছুই বলতে পারছেন না।
‘জাহাজটি দুই দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কী হয়েছিল সেটা আমরা বলতে পারছি না’, বলেন চট্টগ্রামে জার লজিস্টিকসের কর্মকর্তা জিন্নাত আলী।
মালয়েশিয়া থেকে নির্মাণকাজের জন্য পাথর বহন করে জাহাজটি চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় গিয়েছিল বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
জিন্নাত আলী বলেন, মালামাল খালাস করে ক্যাপ্টেন এবং ক্রু-সহ দুইদিন আগে বার্জটি নিয়ে টাগবোট চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকা থেকে গত জুন মাসেও বার্জটিকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে থাকতে দেখা যায়। এর বাইরে জাহাজটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি জার লজিস্টিকস।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাগিব তানজুম বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তারা নিজেরা জাহাজটিতে উঠে পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি। তবে তারা এটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে এতে কোনো মানুষ ছিল না।
স্থানীয়দের মধ্যে যারা জাহাজটিতে উঠেছেন তারা কোস্টগার্ডকে জানিয়েছেন, যে জাহাজটির কার্গো রাখার স্থানটিতে কিছু বালি অথবা পাথরের বস্তা রয়েছে।
কোনো নাবিক ছাড়া জাহাজটি যেভাবে ভেসে এসেছে তাতে বার্জটিকে সচেতনভাবেই পরিত্যক্ত করা হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে কোস্টগার্ড।
প্রতিকূল আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারিগরি গোলযোগের কারণে বার্জটি পরিত্যক্ত করে থাকতে পারেন নাবিকরা অথবা আবহাওয়ার কারণে বার্জটি টাগবোট থেকে ছুটে গিয়ে থাকতে পারে।