প্রকৃতিতে সবেমাত্র শীতের হালকা আমেজ পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু-মিছিল থামার কোনও লক্ষণ নেই। সাধারণ জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের খুব পার্থক্য নেই। মৌসুম বদলের জ্বর না কি কোভিড না কি ডেঙ্গু বাসা বেঁধেছে শরীরে, তা বুঝে ওঠার আগেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুকে গুলিয়ে ফেলে অবহেলা করে অনেক সময়ে রোগীর গুরুতর সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেঙ্গুর জীবাণুবহনকারী মশা কামড়ানোর তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর শুরু হয়। তাই দু’দিনের বেশি জ্বর হলে নিজেরা চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।
এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে প্রত্যেক বছর পৃথিবীর প্রায় ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে কারও কারও ক্ষেত্রে এই জ্বর মারাত্মক আকার নেয়। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার। শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের মারাত্মক অবস্থা বেশি দেখা গেলেও ইদানীং কম বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের একবার ডেঙ্গু হয়ে গিয়েছে, তাদের যখন দ্বিতীয় বার বা তৃতীয় বার ডেঙ্গু হয়, তখন তা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। ‘হেমারেজিক’-এর অর্থ রক্তপাত। রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধমনী ও শিরা ফেটে গিয়ে হুহু করে রক্ত ও প্লাজমা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। বাইরে থেকে রক্ত দিলেও অনবরত রক্তক্ষরণে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। কখন কোন রোগীর ডেঙ্গু যে মারাত্মক রূপ নেবে, তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল।
ডেঙ্গুর জ্বরের সাধারণ উপসর্গ-
জ্বর, মাথা ব্যথা, হাত-পায়ের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা। চোখের পিছনে ব্যথা শুরু হয়।
বমি ভাব, অরুচি। গাঁটে ব্যথা।
গায়ে র্যাশ, চুলকানি, ডায়রিয়া।
দাঁতের মাড়ি দিয়ে, নাক দিয়ে কিংবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়।
গলাব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট।
ডেঙ্গু রোগীর কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে-
ডেঙ্গু ধরা পড়লেও রোগীকে বাড়িতে রেখে শুশ্রূষা করা যেতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ দেখা দিলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সেগুলো হলো-
পেটে ব্যথা।
মল বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত। ডেঙ্গুর সংক্রমণ হলে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে শুরু করে। আর এ কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে হেমারেজ অর্থাৎ, রক্তক্ষরণ হয়। মাড়ি ও নাক থেকেও হতে পারে রক্তপাত।
সারা দিনে যে পরিমাণ প্রস্রাব হত, তার পরিমাণ কমে যাওয়া।
শ্বাসকষ্ট।
ত্বকে লাল লাল র্যাশ।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
ডেঙ্গু রোগীর শরীর চাঙ্গা রাখতে-
চিকিৎসকের মতে ডেঙ্গু হলে শরীরের কোষগুলি পানিশূন্য হয়ে পড়ে। এই সময়ে শরীরে পর্যাপ্ত পানির জোগান দিতে হবে। এই সময়ে পানি খাওয়ার পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ, স্টু, লিকার চা বেশি করে ডায়েটে রাখতে হবে। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার- ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।