সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততোই জমে উঠছে নির্বাচনী আমেজ। এ উপজেলায় পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ৩২৩ ও নারী ভোটার ৯৩ হাজার ৭১৬ জন। ৮৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে আগামী ২ নভেম্বর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত প্রবাসী অধ্যুষিত ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর উপজেলা। এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজার ৩৯ জন। শেষ সময়ে এসে গণ-সংযোগ, উঠান বৈঠক ও প্রচার-প্রচারণায় রীতিমতো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। একমাত্র প্রচার মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিন রাত অভিরাম পরিচালনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ সহ ৩টি পদের বিপরীতে মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ আকমল হোসেন, সাবেক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আতাউর রহমান, স্বতন্ত্র হলেও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, জমিয়তে উলামায়ে মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম ও জাতীয় পার্টি পরিচিত যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রার্থী আব্বাস চৌধুরী।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াই এখন তুঙ্গে রয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ তাদের হারানো চেয়ারম্যান পদটি পুনরায় উদ্ধার করতে চায়। সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা দিন বদলের স্লোগানে এগিয়ে যেতে চান। তবে জমিয়ত এবার নতুন করে ভোটের ভাগ বসাবে। সব মিলিয়ে শেষ সময়ে এসে ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলাতে প্রার্থী ও ভোটার সহ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী কলা-কৌশলে যারা এগিয়ে রয়েছেন, তাদের বিজয় সহজ হবে। তা না হলে ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। নৌকা, আনারস, মটরসাইকেল, খেজুর গাছ, ঘৌড়া প্রতিকে প্রার্থীরা প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও মূলত নৌকা, আনারস, খেজুর গাছের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সাধারন ভোটাররা। তবে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্নও রয়েছে কোনো কোনো ভোটারের মাঝে।
নৌকা প্রতিকের সমর্থকরা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার গেলো কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকায় এবার পুরো নির্বাচনী এলাকায় নৌকার জোয়ার বইছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই ভোটাররা আবারও নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গতবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা হেরে যান। কিন্তু গেলো পাঁচ বছরে জনগনের জন্য কাজ করা সহ বন্যার সময় জনগনের পাশে থাকায় এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আরেক প্রবাসী প্রার্থী জমিয়তের ব্যানালে নির্বাচন করবেন বলে প্রায় তিন বছর ধরে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ গ্রহন করে জনগনের নজরে চলে আসছেন। ভয়াবহ বন্যার সময় জনগনের পাশে থেকে কাজ করায় জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সমর্থকরা। লড়াইটি অবশেষে ত্রিমুখী লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।