মাসিক আট মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবা স্থগিত করেছে টুইটার। ভুয়া অ্যাকাউন্টের অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, কিছু অ্যাকাউন্টে ‘অফিসিয়াল’ ব্যাজও ফিরিয়ে এনেছে প্ল্যাটফর্মটি। অর্থাৎ, অর্থের বিনিময়ে যে কাউকে ব্লু টিক দেয়ার ব্যবস্থাটি আপাতত বন্ধই করে দিয়েছে টুইটার।
জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মটিতে এর আগে ব্লু টিক কেবল রাজনীতিদ, বিখ্যাত ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পাবলিক ফিগারদের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের জন্যই সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে এই চিহ্নটি হয়ে উঠেছিল বিশ্বাসযোগ্যতার একটি প্রতীক।
কিন্তু ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নেয়ার পর অর্থ আয়ে বিজ্ঞাপননির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় সবার জন্য মাসিক আট ডলারে বিনিময়ে ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবা চালু করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে টুইটারের জন্য।
মাস্কের এ সিদ্ধান্তে ভুয়া অ্যাকাউন্টেও ব্লু টিক যোগ হওয়ার জোয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াতে থাকে হু হু করে।
রবলক্স, নেসলে, ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট এলি লিলি, লকহিড মার্টিনের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ব্লু টিক-যুক্ত ভুয়া অ্যাকাউন্ট ছড়িয়ে পড়ে। বাদ পড়েনি মাস্কের নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেসলা এবং স্পেসএক্সও।
এর মধ্যে এলি লিলির ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ‘ইনসুলিন বিনামূল্য করে দেয়া হবে’ এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরে বিষয়টি পরিষ্কার করে ভুল বোঝাবুঝির জন্য ক্ষমা চায় ওষুধনির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
এলি লিলির ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়েছে, যাদের কাছে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে বিভ্রান্তিকর বার্তা গেছে, তাদের কাছে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি।
টেসলার ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকেও বেশ কয়েকটি ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচারে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের মতো একই ছবি ব্যবহার করেছিল প্রতারকরা।
ফলে বিতর্কের মুখে শেষপর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে ব্লু টিক সেবা স্থগিত করেন মাস্ক। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লু টিক ভেরিফিকেশন চেক অপশন গায়েব হয়ে গেছে।
এদিন টুইটারের একটি সহযোগী অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়েছে, ছদ্মবেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমরা কিছু অ্যাকাউন্টে ‘অফিসিয়াল’ লেবেল যোগ করেছি।
এই লেবেল মূলত গত বুধবার (৮ নভেম্বর) চালু করা হয়েছিল। পরে তা বাতিল করেন ইলন মাস্ক। কিন্তু বিতর্কের মুখে সেটি আবারও ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি টুইটার।
ইলন মাস্ক ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কেনার চুক্তি সম্পন্ন করার পর গত দু’সপ্তাহ ধরেই চরম বিশৃঙ্খলা চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। তিনি এরই মধ্যে টুইটারের প্রায় অর্ধেক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছেন, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও পরিচালনা পর্ষদকে সরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি টুইটার দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষধনী।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ট্রেড কমিশন গত বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে’ টুইটার ও মাস্কের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে।