আমি শুনেছি, (গেলো নির্বাচনে) পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্সভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার বিষয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে সই করেন সংগঠনটির সভাপতি ও এসবি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
বিবৃতিতে বলা হয়, গেলো ১৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক অ্যাবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত এক প্রশ্নে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি পুলিশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ উত্থাপন করেন। তার ওই বক্তব্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। তার মন্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত বিব্রত ও মর্মাহত হয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
ওই অনুষ্ঠানে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি শুনেছি, (গেলো নির্বাচনে) পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্সভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি। জাপানি রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য অসমর্থিত, ভিত্তিহীন ও অনভিপ্রেত। গেলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে দেশের মূল ধারার সব গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতামতে সর্বত্রই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। এরপরও গেলো নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তবিহীন ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই জাপানি রাষ্ট্রদূতের মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন মন্তব্য বাংলাদেশ পুলিশসহ দেশবাসীকে হতবাক করেছে।
নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার বিষয়ে প্রকৃত তথ্য হলো, বাংলাদেশ পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। ভোটারের প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া বা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের ভোট প্রদানে পুলিশের কোনো ভূমিকা বা কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশ পুলিশ সব নির্বাচনে অত্যন্ত পেশাদারত্বের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশের মতো একটি পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে জাপানের রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় বীর সদস্যরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রায় চৌদ্দ হাজার পুলিশ সদস্যের সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ ও হাজারের অধিক পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশ সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জানায়, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও উন্নয়নের বৃহৎ অংশীদার। ঐতিহাসিকভাবে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুগভীর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক মন্তব্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে হতাশ এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তার বক্তব্যের উল্লেখিত অংশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ সম্পর্কে ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তার আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা রাষ্ট্রের কল্যাণ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। বাংলাদেশ পুলিশ দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী মানুষের পাশে থেকে রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।