বেড়াতে যাওয়ার টাকার জন্য পরিকল্পনা করে মাদকাসক্ত প্রেমিক রাজুকে সাথে নিয়ে নানাকে হত্যা করেছে নাতনি আনিকা। এ ঘটনায় জড়িত ছিল তার ছোট ভাই আলভিও। গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার চকবাজার এলাকায় হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার।
তিনি বলেন, আনিকাদের পরিকল্পনা ছিল নানাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে লুট করা হবে নগদ টাকা। তবে ঘটনাক্রমে ডাকাতির সময় মারধরে মারা যান নানা হাজী মনসুর আহম্মেদ (৮০)।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত পরিবারের সদস্যরাই।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর বকশিবাজার, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে মনসুর আহম্মেদের দুই নাতি-নাতনিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মনসুর আহম্মেদের মেয়ের দুই ছেলে-মেয়ে শাহাদাত মুবিন আলভী-আনিকা তাবাসসুম, তাবাসসুমের ছেলেবন্ধু রাজু, রাজুর ভাই রায়হান ও তাদের পরিচিত সাঈদ।
পুলিশ জানায়, গত ১৭ নভেম্বর একমাত্র নানা ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা ছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। এই সুযোগে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে চকবাজার খাজে দেওয়ান রোডের ফার্স্ট লেনের ছয়তলা ভবনের দোতলায় ডাকাতির জন্য প্রবেশ করে একদল তরুণ।
সত্তরোর্ধ্ব হাজী মনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাধা দেন। আর তখনই মারধর করলে তিনি মারা যান। আর ডাকাতি করতে আসা তরুণরা তার বাসা থেকে নিয়ে যান ৯২ হাজার টাকা।
ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে যে, মনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরাই জড়িত।
ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থলে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এই সিরিঞ্জকে কেন্দ্র করেই তদন্ত মোড় নেয়। শুরুতে আমরা দস্যুতাসহ খুনের মামলা নিলেও পরে পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় খুনের প্রমাণ পাই।
তিনি বলেন, নাতনি আনিকা ন্যাশনাল ডেন্টালে পড়েন। তিনি মূল পরিকল্পনাকারী, তার ভাই, তার ছেলেবন্ধু ও অন্যান্যরা পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন। ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই টাকা জোগাড় করতেই ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়।
এক মাস আগে এই ডাকাতির পরিকল্পনা হয় উল্লেখ করে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিলেন। সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েতে অংশ নিতে যান। আনিকাও সেখানে যান। সেখান থেকেই ঘটনার তদারকি করেন তিনি।
আর বাড়ির আশেপাশে থেকে আনিকার ছেলেবন্ধু রাজু ওয়াচার হিসেবে কাজ করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান ও সাঈদ।
এই তিনজন ভুক্তভোগীকে ইনজেকশন দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দেন ভুক্তভোগী। আর তখনই রায়হান ও সাঈদ মনসুর আহম্মেদকে মারধর করে ঘরে থাকা টাকা লুট করে নিয়ে যান। টাকাগুলো খুঁজে বের করে দেন আলভী।
বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, ৯২ হাজার টাকা লুট হয়। এখান থেকে ৬২ হাজার টাকা আনিকার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি করা। আনিকা ও আলভী পরিবার থেকে হাতখরচ হিসেবে খুবই সামান্য টাকা পেতেন। ঘুরতে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন থেকে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। ঘটনাক্রমে হত্যার শিকার হন মনসুর আহম্মেদ।
ভুক্তভোগী মনসুর আহম্মেদের স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের দুই সন্তান ডাকাতির পরিকল্পনায় জড়িত।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এই ঘটনায় আনিকা ও আলভী জড়িত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারলেও তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন, জড়িতদের ডিজিটাল ফরেনসিক, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার দায় স্বীকারও করেছেন গ্রেপ্তার পাঁচজন।