'কাসাভা বা শিমুল আলু' বাংলাদেশে এই শস্যটির নাম নতুন হলেও বিশ্বে এটী প্রসিদ্ধ খাদ্যশস্য। দেশের কৃষিখাতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছে এই শস্যটি। প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফসল থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায়। যা দিয়ে সাগু, রুটি, বিস্কুট, চিপস্ ও গুলোকোজসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তৈরি করা যায়। পোল্ট্রিফিড, বস্ত্র ও কাগজ তৈরির শিল্পে এটি প্রচুর ব্যবহার হয়। আটার পুষ্টিমান সম্পন্ন শিমুল আলু দিয়ে গমের আটার চেয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। এটি ভিটামিনের দিক দিয়েও শীর্ষে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেবীগঞ্জ উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ করা হয়েছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়ায় কাসাভা চাষে উপযোগী হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় রংপুর বিভাগের প্রথম কাসাভা চাষ শুরু হয়েছে। বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার এবং দেশে খাদ্য ও ওষধ শিল্পে ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহার হওয়ায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে এই কাসাভার। রোগ-বালাইবিহীন, সহজ চাষ পদ্ধতি এবং অধিক লাভের আশায় রফতানিযোগ্য এই ফসল চাষ করা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর-পতিত জমিতে কাসাভা চাষ, সহজ পদ্ধতি, স্বল্প পরিচর্যা ও খরচ সর্বোপরি লাভ বেশি হওয়ায় এই কাসাভা চাষে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।
কাসাভা চাষী মোস্তফা কামাল জানান, কাসাভা চাষের ৯ মাসে প্রতিটি গাছে বাম্পার ফলন এসেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষে কাসাভা ঘরে তুলতে পারবো। চলতি ডিসেম্বরে প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি কাসাবা উত্তোলন করতে পারবো আশা করছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হবে। কাসাবা গাছের কোনো কিছুই ফেলনা নয়। এর পাতা সবজি হিসেবে কিংবা ভাজি করে খাওয়া যায়। গাছ দিয়ে গোখাদ্যসহ জৈব সার তৈরি হয়। কাসাভা থেকে সাগু দানা, বার্লিসহ পোশাক ও ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল তৈরি হয়।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.শাফীয়ার রহমান জানান, মোস্তফা কামালের জমিতে কাসাভার ফলন দেখে অভিভূত হয়েছেন তিনি। কাসাবা চাষের শুরু থেকে এপর্যন্ত সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছেন তারা।
কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌসি ইয়াসমিন বলেন, কন্দাল জাতীয় ফসলের মধ্যে কাসাবার চাহিদা অনেক বেশি। চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বছর দেশে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন কাসাভা আমদানী করা হয়। চাহিদার মাত্র দুই ভাগ দেশে উৎপাদন হয়। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং দেশীয় শিল্পের চাহিদা মেটাতে দেশে কাসাভা চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।