পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া। মাত্র তিনটি দেশ নিয়ে এই মহাদেশ গঠিত। এটিই একমাত্র মহাদেশ যার নাম করা হয়েছে দেশের নামে। কারণ অস্ট্রেলিয়া দেশটি এই মহাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ জায়গা জুড়ে আছে।
অস্ট্রেলিয়া শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘অষ্ট্রালিস’ থেকে। যার অর্থ ‘দক্ষিণ দিকের’। পাপুয়া নিউগিনি ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু অংশ নিয়ে এই মহাদেশ গঠিত। এটি একটি দ্বীপ মহাদেশ।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মহাদেশ হলেও দেশ হিসেবে বিশ্বে ৬ষ্ঠ।
নানা কারণেই অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর বাকি সব অঞ্চলের চেয়ে আলাদা। বহুমাত্রিক ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্য ও বিরল সব প্রাণীর আবাস এই দেশটিতে।
অস্ট্রেলিয়া নিয়ে আলোচনা হলে দেশটির জীববৈচিত্রের কথা বিশেষভাবে চলে আসে। দেশটির প্রতি ৫ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ৪ প্রজাতির প্রাণীই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, দেশটির ৮০ শতাংশ গাছ-গাছালি ও প্রাণীর আবাসস্থল শুধুমাত্র সেখানেই। পৃথিবীর অন্য কোথাও এই প্রাণীদের অস্তিত্ব নেই।
এই অসাধারণ জীববৈচিত্র্য দেশটিকে বিশ্বের বাকি সব দেশ থেকে আলাদা করেছে। একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের একমাত্র দেশ বা অঞ্চল যেটি একই সঙ্গে দেশ ও মহাদেশ হওয়া শর্ত পূরণ করেছে।
একটি দেশ হতে কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়, সেটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। যাদের নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা ও নির্দিষ্ট ভূখণ্ড আছে, তাকে দেশ বলা যায়। কিন্তু মহাদেশ হওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কোনো শর্ত নেই। কিন্তু অন্যান্য মহাদেশগুলোর সঙ্গে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে মিল থাকায় অস্ট্রেলিয়াকে একটি মহাদেশ বলা যায়।
সাধারণত অনেকগুলো দেশ ও বিশাল ভূখণ্ড নিয়ে একটি মহাদেশ গঠিত হয়। প্রতিটি মহাদেশ আলাদা টেকটোনিক প্লেটের ওপর ভাসমান থাকে এবং অন্য অঞ্চলের তুলনায় স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য থাকে। এটা অবশ্য কোনো বই বা সনদে লিখিত শর্ত না। প্রতিটি মহাদেশকে আলাদাভাবে তুলনা করলে এগুলো একেকটি তুলনার একক হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বসতিস্থাপক ছিল এখানকার আদিবাসী জাতিগুলি। এরা প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ বছর আগে দেশটিতে অভিগমন করে। ১৭শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কাছে দ্বীপটি অজানা ছিল।
১৭৮৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট জ্যাকসনে প্রথম স্থায়ী উপনিবেশ সৃষ্টি করা হয়; এটি ছিল ব্রিটিশ কয়েদিদের উপনিবেশ। এটিই পরবর্তীকালে বড় হয়ে সিডনী শহরে পরিণত হয়। ১৯শ শতক জুড়ে অস্ট্রেলিয়া এক গুচ্ছ ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে কাজ করত। ১৯০১ সালে এগুলি একত্র হয়ে স্বাধীন অস্ট্রেলিয়া গঠন করা হয়।
তবে এসব প্রচলিত শর্তের ব্যতিক্রমও আছে। যেমন: এশিয়া ও ইউরোপ একই টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। কিন্তু তারপরও মহাদেশ দুটির সংস্কৃতি, মানুষের জীবনযাপনের পদ্ধতি ও জীববৈচিত্র্য অনেকটাই আলাদা।