আর্কাইভ থেকে ফুটবল

১৬ বছরের এক দীর্ঘ অধ্যায়ের সমাপ্তি

১৬ বছরের এক দীর্ঘ অধ্যায়ের সমাপ্তি

২০০৫ সালের গ্রীষ্মের কোন এক দিন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নিয়ে আসা হয় সদ্য আঠারো পার করা চুল বড়, লিকলিকে এক স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে। সেভিয়ার জার্সি গায়ে জড়িয়ে যে মূলত খেলতেন রাইটব্যাক পজিসনে। ক্ষিপ্রতা আর শরীরি ভাষায় রিয়ালের সাদা জার্সিতে যাকে বেশ ভালো মানাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। সেই ধারণা সত্যি করেছেন। পরের ১৬ বছরে ক্লাবকে এনে দিয়েছেন ২২ টি শিরোপা। কখনো সাদা জার্সিটার জন্য ঘাম ঝরিয়েছেন, কখনো বা রক্ত। কখনো কার্ড দেখেছেন দলকে বাঁচাতে গিয়ে, কখনো বা সতীর্থকে। তবে লস ব্ল্যাংকোদের হয়ে এতগুলো বছর এমনভাবে মিশে ছিলেন যেন এটাই তার ঘর, এটাই পরিবার।
 
সভাপতি পেরেজের প্রথম দফায় গ্যালাক্টিকোদের ভিড়ে রামোসই ছিলেন বার্নাব্যুতে আসা একমাত্র স্প্যানিশ ফুটবলার। রেকর্ড ২৭ মিলিয়নে তাকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। এর আগে এত দামে কোন স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে কেনার নজির ছিলো না ফুটবলবিশ্বে। নজির ছিলো না, গড়েছেন। যেমনটা গড়েছেন আরও কতশত রেকর্ড। ২০১৪ সালে রিয়ালের লা ডেসিমা জয়ে তিনিই তো ছিলেন নায়ক। ঐতিহাসিক ৯২:৪৮ সেকেন্ডে গোল করে যে কিনা স্প্যানিশ ক্লাবটার দীর্ঘদিনের আক্ষেপ দূর করেছিলেন। 

২০১৫ সালে কাঁধে ওঠা অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্বটাও যে কিনা সামলেছেন বেশ ভালোভাবে। প্রয়োজনে, খারাপ সময়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আগলে রেখেছেন। অধিনায়ক রামোস এমন একজন, যাকে কিনা নিজের দলে দেখতে চাইবেন খোদ রাইভাল ক্লাবের সমর্থকরাও। চাইবেই বা না কেন? ক্লাবের হয়ে নিজের সবটা উজাড় করে দেয়া অধিনায়ক থাকলে দলের বাকি সদস্যরা একটু বেশি উজ্জীবিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রামোস এটাই করে দেখিয়েছিলেন।

সাদা জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলেছেন ৬৭১ টি ম্যাচ। ডিফেন্ডার হয়েও এই ম্যাচগুলোতে ১০১ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন। চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পাশাপাশি জিতেছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা। তবে প্রতিটি শুরুর যেমন শেষ থাকে, তেমনি এই স্বর্ণযুগেরও সমাপ্তি রয়েছে। সেই সমাপ্তিটা এখনই। ৩৫ পার করা রামোসের সঙ্গে ১ বছরের চুক্তি করতে চেয়েছিল পেরেজ, তাতে সংযোজন ১০ শতাংশ বেতন কর্তন। তবে রামোস চেয়েছিলেন অন্তত ২ বছরের চুক্তি, সঙ্গে বেতন কমানোর বিষয়েও ছিল কিছুটা আপত্তি। দুই পক্ষের দুই প্রান্তে অবস্থান সুরাহা বের করতে সম্ভব হয়নি। তাই ১৬ জুন রাতেই রামোসের বিদায় প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক বার্তা জানিয়ে দেয় বিশ্বের অন্যতম সফল ক্লাবটি।

বয়সের ভারটা এই স্প্যানিয়ার্ডকে ভোগাচ্ছিল বেশ ভালোভাবেই। শেষ মৌসুমেও ইনজুরি জর্জরিত সময় পার করতে হয়েছে ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলারকে। রিয়ালের হয়ে খেলতে পেরেছিলেন মোটে ২১ ম্যাচ। লিগের শেষ ম্যাচে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে স্কোয়াডে থাকলেও মাঠে নামা হয়নি। আজ নামবেন বার্নাব্যুতে। বিদায়বেলার আনুষ্ঠানিকতায় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন। সমর্থকদের জন্য হয়তো আরেকবার বলবেন 'আলা মাদ্রিদ'। হয়তো বলবেন ক্লাব ছাড়লেও ভালোবাসা ছাড়েননি। তবে এগুলো শুধুই মুখের কথা। সার্জিও রামোস রিয়ালের জার্সি গায়ে জড়িয়ে যে ফের মাঠে নামছেন না তা নিশ্চিত। ১৬ বছরের যে বন্ধন ছিন্ন হলো, সেখানে আবেগকে এক পাশে করে রাখলেও দলের প্রতি তার অবদান কি করে ভোলা যাবে? রিয়ালের জার্সি গায়ে তিনি যে শুধু একজন ফুটবলারই ছিলেন না, ছিলেন তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। 

এএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ১৬ | বছরের | এক | দীর্ঘ | অধ্যায়ের | সমাপ্তি