কাগজের আগুন দামে বিপাকে রয়েছেন যশোরের ছাপাখানা মালিকরা। দিন দিন কমছে প্রকাশনা কাজ। প্রেসগুলো আগে স্কুল-কলেজের খাতা তৈরির পাশাপাশি নিজস্ব খাতা তৈরি করে বিক্রি করতো। এখন তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গেলো ছয় মাসের ব্যবধানে কাগজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যশোরের কাগজের দোকানগুলো এবং ছাপাখানা ঘুরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
কাগজের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির প্রতি ৫শ পিস ৬৫ গ্রাম অফসেট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায়। ছয় মাস আগে এর দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। একইভাবে ৭০ গ্রাম অফসেট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা; যার দাম ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা; যার দাম আগে ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। ১০০ গ্রাম অফসেট কাগজের দাম আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা; যার দাম এখন ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা।
এছাড়া ডিমাই ২১/৩৪ সাইজের ৪২ গ্রাম কাগজের প্রতি ৫শ পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা। আগে এর দাম ছিল ২৫০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে ডিমাই ২৩/৩৬ সাইজের ৫৫ গ্রাম কাগজের প্রতি ৫শ পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা। আগে যার দাম ছিল ৩৫০ টাকা। যশোরের বাজারে বসুন্ধরা, আম্বার, পেপারটেক, ডাবল এ, ফ্রেশ ও পারটেক্স কোম্পানির কাগজ বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি একইহারে বিভিন্ন প্রকার খাতার দামও বেড়েছে। ১২৪ পৃষ্ঠার ডিমাই সাইজের খাতা আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া ১২৪ পৃষ্ঠার স্কুল-কলেজের ছোট সাইজের খাতা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আগে এর দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেলো ছয় মাসে বিভিন্ন কাগজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ী ও ছাপাখানা মালিকরা। তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে তারা আর স্কুল-কলেজের খাতা তৈরি করে ব্যবসা করতে পারছেন না।
শহরের জামে মসজিদ লেনের রয়েল স্টেশনারির স্বত্বাধিকারী সাঈদ হাসান জানান, প্রায় প্রতিদিনই কাগজের দাম বাড়ছে। আগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কাগজ বাকিতে দিতেন। ছোট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতেন। এখন আর তা দিচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য কাগজ নিজের ঘরে থাকলে তো দাম বাড়ছে। আবার দাম বাড়ার কারণে দ্বিগুণ টাকা বিনিয়োগ করে সীমিত লাভ থাকছে। ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
তিনি জানান, আগে খাতা তৈরি করে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ডজন বিক্রি করতেন। খুচরা ২০ টাকা বিক্রি হতো। এখন সেই খাতা খুচরা ৩০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। একই দামে বিভিন্ন কোম্পানির খাতা বিক্রি হচ্ছে। ফলে স্থানীয়ভাবে খাতা তৈরি করে ব্যবসা করা যাচ্ছে না।
মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী আবু জাফর বাচ্চু জানান, আগে তারা খাতা তৈরি করে বিক্রি করতেন। এখন অর্ডার ছাড়া আর খাতা তৈরি করছেন না। আর সেই অর্ডারও মিলছে না। কারণ বড় বড় কোম্পানিই এখন অর্ডার নিয়ে খাতা তৈরি করে দিচ্ছে। ক্রেতারা এখন সেদিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি কাগজের দামের কারণে অন্যান্য প্রকাশনাও সংকুচিত হয়ে আসছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ছাপার দিকে যাচ্ছেন না। হ্যান্ডবিল, পোস্টারসহ বিভিন্ন প্রকাশনার ক্ষেত্রে যত কম সংখ্যক ছেপে পারা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি সবার।
একতা প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী রকিব হোসেন স্বপন জানান, তারা এখন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ডারের খাতা তৈরি করছেন। এর বাইরে কোনো খাতা বানাচ্ছেন না। কাগজের পাশাপাশি কালির দামও বেড়েছে। ফলে সেই অর্ডারও ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ছাপাখানাগুলো এখন দুঃসময় পার করছে।