আর্কাইভ থেকে আওয়ামী লীগ

দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে যা বললেন জাহাঙ্গীর

দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে যা বললেন জাহাঙ্গীর
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের দলে ফেরা নিয়ে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল অবশেষে সেটির অবসান ঘটেছে। তরুণ এই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নগরবাসী। তারা বলছেন, কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে সংগঠন শক্তিশালী হবে এবং তিনি পুনরায় মেয়রের দায়িত্ব পেলে গাজীপুর সিটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। গত শনিবার (১৭ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত নেতাদের ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই নগরবাসী বিশেষ করে জাহাঙ্গীর সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস শুরু হয়। জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে- এমন খবরে তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। জাহাঙ্গীরের বাড়ির সামনে নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল ও ভিড় করতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষের মনে এখন একটিই প্রশ্ন মেয়র পদে ফিরছেন কি জাহাঙ্গীর? ভারপ্রাপ্ত মুক্ত হচ্ছে কি গাজীপুর সিটি করপোরেশন। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের মৌচাক স্কাউট ক্যাম্প মাঠে সাংবাদিকের কাছে মুখ খোলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদ ফেরার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাকে তো মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত যেসব কারণে করা হয়েছে, সেগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করব। তৃণমূলকে শক্তিশালী করে সংগঠনের গতি বাড়াতে কাজ করব। আমি স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী দিনে আধুনিক গাজীপুর গড়ার কাজে হাত দেব। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আমরা সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে যা যা করার সবই আন্তরিকতার সঙ্গে করব। তিনি আরও বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গাজীপুর মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের সবাইকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরকে আধুনিক বাসযোগ্য আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। সাধারণ ক্ষমার আওতায় জাহাঙ্গীর আলম পড়েন কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছিল। তবে গত মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি পরিষ্কার করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর তো অ্যাপ্লাই (আবেদন) করেছে। তারটা মওকুফ করা হয়েছে। যারাই আবেদন করেছে, তাদেরকেই ক্ষমা করা হয়েছে। এক শর মতো ছিল। অনেকে কলহে-বিবাদে জড়িয়েছে, শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। এগুলো ক্ষমা করা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কথোপকথনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম। বিতর্কিত মন্তব্যে ‘ক্ষুব্ধ’ ব্যক্তিরা তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জেলায় আদালতে মামলাও করেন। সরকারি সম্পদের অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৫ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর প্রায় ৯ মাস পর গত ১৪ আগস্ট পুনরায় মেয়র পদ ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে রিট করেন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও দলে ফিরতে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। যার ফলশ্রুতিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন দলীয় | সিদ্ধান্ত | নিয়ে | জাহাঙ্গীর