আওয়ামী লীগ

পদত্যাগই ছিলো অন্যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ: সোহেল তাজ

বায়ান্ন প্রতিবেদন

‘আমাকে অনেকেই বলে এতদিন কথা বলেন নাই কেন? তাদের উদ্দেশ্যে বলবো- আমি ছিলাম প্রথম ব্যক্তি যে প্রতিবাদ করেছিলাম, এবং সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ করেছিলাম।  আমি সেই প্রথম ব্যক্তি যে মন্ত্রীর পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যগ করেছিলাম ৬ মাসের মধ্যে। এটাই ছিলো আমার নিরবে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ। অন্যায়, দুর্নীতি, অনিয়নমের বিরুদ্ধে করা প্রথম প্রতিবাদ। একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া  সাক্ষাতকারে এভাবেই জানালেন সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ওই গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে সোহেল তাজ বলেন, আসলে বিশ্লেষণ করতে গেলে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। কারণ বর্তমান যে আওয়ামী লীগ ছিলো আর মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ এক না। আমাদের এটা বুঝতে হবে। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যায় বাকশালের মাধ্যমে। 

এসময় তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের পর ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগকে নতুন ভাবে পুনঃগঠন করা হলো। আমার আম্মা আহবায়ক হয়ে দলের হাল ধরে প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগঠন গুছিয়ে নিলেন। যখন ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলো তখন প্রান্তিক পর্যায়ের সকল নেতা কর্মীসহ ৯৯ শতাংশ কাউন্সিলর আমার আম্মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীকে সভাপতি হিসেবে চাইছিলেনকিন্তু হুট করে আইনজীবি মালেকের(আব্দুল মালেক উকিল) নাম প্রস্তাব করা হলো।  তারপর দেশে শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসলেন এবং আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন।

 সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আশির দশকের আওয়ামী লীগের কয়েকটা ব্লক ছিলো।  শেখ হাসিনা ব্লক ও কিছু সিনিয়রদের ব্লক ছিলো।  একাধিক ব্লক থকার ফলে দলের উচ্চ পর্যায়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হত।  ফলস্বরূপ প্রন্তিক পর্যায়ের কর্মী ও নেতাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অনেক তর্ক বিতর্কের পাশাপাশি বিস্তর আলোচনা হত।  এক কেন্দ্রিক কোন সিন্ধান্ত নেয়ার বা দেয়ার সুযোগ ছিলো না। 

সোহেল তাজ আরও জানান, নব্বইয়ের দশকে এই ব্যাপারটা পরিবর্তন হতে লাগলো। ক্ষমতার ব্যাবহারের ব্যাপারটা পরিবর্তন হতে শুরু করলো।  এককেন্দ্রিক ক্ষমতার ব্যবহার চর্চা শুরু হয়ে গেলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হত্যাকাণ্ডের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা দায়ী উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, ব্যক্তির থেকে দল বড়, দলের থেকে দেশ বড়। আমরা সবাই এই জায়গাটা উলটে ফেলেছিলাম।  আওয়ামী লীগ তার স্বত্বা থেকে সরে এসেছে।  দলটির আদর্শ, নীতি, মতাদর্শ থেকে সরে এসেছে ২০০৮ সালের পর থেকে। পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি ও পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে।  এর দায়ভার অবশ্যই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে।

কী কারণে দায়ভার শেখ হাসিনাকে নিতে হবে তার কারণও জানিয়েছেন সোহেল তাজ। তিনি জানান, এক নম্বর কারণ হলো-এখানে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ১৫ বছরের যে দুঃশাসন হয়েছে-দলীয় প্রধান হিসেবে এটাতো ওনারই (শেখ হাসিনা) দায়বদ্ধতা। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘এই পুরো জিনিসটাকে যারা অ্যালাউ (সমর্থন) করেছে দল হিসেবে  এবং যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদেরতো অবশ্যই দায়িত্ব আছে; তাদের জবাব দিতে হবে না এটা কীভাবে হলো?’

সোহেল তাজ বলেন, আমাদের সামনে অনেক কিছুই তুলে আনা হয়েছিলো। এখন আমরা দেখছি কোন কিছুই সত্য নয়। ওই যে বললাম যন্তর মন্তর ঘরের ভিতর মগজ ধোলাই। কিন্তু আমি প্রথম ৬ মাসেই বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ আমি দেখেছিলাম পরিবারের অন্য সদস্যারা মন্ত্রাণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় প্রাভাব খাটিয়ে কাজ করছিলো। যেমন আপনারা জানেন আমার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনেক বাণিজ্য হয়। বলদি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে লিস্ট করা আছে সব কিছুর জন্য। বুঝতেই পারছেন এটা অনেক বড় একটা ব্যবসা।  আমি দায়িত্বে থাকাকালীন এইসব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কে বা কারা এসব কাজের সাথে জড়িত এসব ব্যাপারে জানা ছিলো।  

আওয়ামী লীগ কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এর সন্তান সোহেল তাজ বলেন, আওয়ামী লীগ লস্ট ইটস মরাল কম্পাস। এটা কেন হয়েছে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু আরো বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। আদর্শ, নীতি, মতাদর্শের বাইরে এসে আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না। এই দলকে ঘুরে দাড়াতে হলে তাদের দলীয় মতাদর্শকে খুঁজে পেতে হবে। পাশাপাশি দলের নাম ব্যবহার করে যেসব নেতাকর্মীরা সুবিধা নিয়েছেন এবং গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারপর দলের যদি আত্মউপলব্ধি আসে, আনুশোচনা আসে, অনুতাপ আসে তাহলে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

জেডএস/ 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পদত্যাগ | সোহেল তাজ | দুর্নীতি