বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই শেখ হাসিনা ও তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা করার হিড়িক পড়ে যায়।বেশিরভাগই হত্যা মামলা। দায়ের হয়েছে। তবে রাজধানীর থানাগুলোতে দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাদী চেনেন না আসামিকে। আসামিও বাদীর নাম শোনেননি কখনও।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের দিন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ১৮২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১৬২টিই হত্যা মামলা। এ ছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় ১৩টি ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে ৯টিসহ মোট ২২টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মামলাগুলোর অভিযোগও একই ধরণের। অভিযোগে বলা হয়েছে-শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা করেছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় মাসে রাজধানীর থানাগুলোতে ২৪৮টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগ এজাহার একই ধরনের। প্রথম ১০ থেকে ২০ জন আসামি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ প্রভাবশালী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। এসব মামলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাদী চেনেন না আসামিকে। আসামিও বাদীর নাম শোনেননি কখনও।
গত ২৫ আগস্ট ঢাকার দোহার থানায় এমনই একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজনসহ ১৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে থাকা ঠিকানার সূত্র ধরে আসামির খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন। অথচ ওই ব্যক্তি দাবি করছেন, গত ১০ বছরেও তিনি দোহার যাননি।
রাজনৈতিক পরিচয় না থাকা ওই ব্যক্তি আরও জানান, ‘তিনি ব্যবসা করেন। এই হিসেবে সরকারে যেই থাকে তাদের সঙ্গেই মিলে চলতে হয়। তারা কোনো রাজনীতি করেন না। তার নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে, অথচ গত ১০ বছরে তিনি দোহার যাবনি। সরকারের কাছে তার আবেদন, এভাবে যেনো তাদের হয়রানি না করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী শাজাহান মাঝি একটি গণমাধ্যমকে জানান, মামলার আসামিরদের অধিকাংশকেই তিনি চেনেন না। আসামিদের না চিনে মামলা দেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক মামলা তাই সবাইকে চেনেন না। নেতারা যাদের নাম দিয়েছেন তাদের নামই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এ ধরণের মামলায় প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যেতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহেদ আজিম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ভিন্ন মত পোষণের জন্যেই যেন কোন মামলা না হয়, এটাই তারা প্রত্যাশা করেন। এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তদন্ত করতে হবে। যে দোষী থাকবে আর যে নির্দোষ সে মামলা থেকে বাদ যাবে।
এমআর//