ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককেন্দ্রের (টিএসসি)-পাশে মেট্রোরেলের স্তম্ভে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি (‘ঘৃণাস্তম্ভ’) গতকাল শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে মুছে ফেলা হয়। ঘৃণাস্তম্ভে’ থাকা গ্রাফিতিটি অর্ধেকটা মুছে ফেলা হয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাশের ‘ঘৃণাস্তম্ভের’ সামনে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়েছে জেনে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
গতকাল দিনগত রাত আড়াইটা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সেই বিক্ষোভ শেষ হয় ভোরে। ‘পরে ‘ঘৃণাস্তম্ভে’ শেখ হাসিনার আরেকটি গ্রাফিতি আঁকা হয়। গতকাল রাত দুইটার দিকে ঘৃণাস্তম্ভটিতে থাকা গ্রাফিতি মুছে ফেলতে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন ইকবাল ও দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক।
যাঁরা গ্রাফিতি মুছছিলেন তাঁদের কাছে কারণ জানতে চেয়ে মহিউদ্দিন ইকবাল গ্রাফিতি মুছে ফেলা বন্ধ করতে বলেন। ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপে পোস্ট করলে শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি মুছে ফেলার প্রতিবাদ জানান।
এরপর সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলে যান। এটি কেন মুছে ফেলা হচ্ছ ? এর পেছনে কারা জড়িত ? কার অনুমতিতে এমনটা করা হচ্ছে ? জানতে চান। তখন মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে থাকা এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে গ্রাফিতি মুছে ফেলা হচ্ছে। এ কথা শুনে শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ জানান।
এই ঘটনায় প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা আহ্বান জানালে রাত সাড়ে তিনটার দিকে প্রক্টর ঘটনাস্থলে যান। তখন প্রক্টর বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা যখন মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি পাঠায়, তখন এখানে থাকা দুটি ছবিও (শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার) চলে যায়। তাই তাঁরা (মন্ত্রণালয়) প্রশ্ন তোলেন, এখানো এই দুজনের ছবি থাকবে কেন? তাঁকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসারকে বলেন। এস্টেট অফিসার তখন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে বলে দেন গ্রাফিতি মুছে ফেলার জন্য। তাদের (মেট্রোরেল) পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে এটা মুছে ফেলা হচ্ছিল।
প্রক্টরের এমন বক্তব্য শুনে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ দেখান। তারা প্রশ্ন করেন এটা যে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’, তা কি প্রক্টর জানতেন না ? তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘বাহ্ প্রক্টর চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার’, ‘খুনি হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ার-সাবধান’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘খুনির ছবি মুছল কারা, স্বৈরাচারের দোসর তারা’; ‘জুলাইয়ের চেতনা বৃথা যেতে দেব না’, ‘ঘৃণাস্তম্ভ মুছলো কেন, প্রক্টর জবাব চাই’।
এসময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টর ও এস্টেট অফিসার ফাতেমা বিনতে মোস্তফার পদত্যাগ দাবি করেন।
শিক্ষার্থীদের এমন প্রতিক্রিয়ায় ঘটনাস্থলে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভুল তো আমাদেরও হতে পারে।’ প্রক্টর বলেন, প্রয়োজনে এই ভুলের জন্য তিনি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্ষমা চাইবেন। তবু যেন শিক্ষার্থীরা তাঁকে ভুল না বোঝেন। এটা ষড়যন্ত্র নয়, ভুল।
পরে ভোর সাড়ে চারটার দিকে এস্টেট অফিসার ফাতেমা বিনতে মোস্তফাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘সব প্রক্টর জানেন। আমি কিছু বলতে পারছি না।’
এর আগে রাত তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনের পর থেকে এটা সারা পৃথিবীতে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ বা হাসিনাকে ঘৃণার প্রতীক। এখানে শিক্ষার্থীদের রক্তের দাগ লেগে আছে। কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে এই রক্তচিহ্ন মুছে দিতে চায়, তা তদন্ত করে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’