অপরাধ

শ্বশুরকে জেল খাটিয়েছেন নারী ইউএনও

বায়ান্ন প্রতিবেদন

পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা বানিজ্য, ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন। এসব অপরাধ বাস্তবায়ন করতে সরকারী আমলা, পুলিশ, রাজনীতিবিদদের ব্যবহারের অভিযোগে রয়েছে। এসব অভিযোগে রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একজন ভূক্তভোগী। ৪০ পৃষ্ঠার অভিযোগে মোট ১৩টি অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।  

অভিযোগ থেকে জানা যায়, সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়ার স্বামী আশরাফুজ্জামানের উত্থান মূলত ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  সাহারা খাতুনের  পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিনহাজ উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার পরিবারের জামাই পরিচয় দেয়া শুরু করে। এই পরিচয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই সম্পর্ক শো-ডাউন করে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিতে বনে যায় পেশাদার প্রতারক। পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফাঁসিয়ে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে টাকা আদায় করা হয়ে উঠে তার প্রধান ব্যবসা। পাশাপাশি সরকারী  কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে সে। এসব অপকর্ম করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করে মিনহাজ। তার প্রতারণা এত বেশী হয়েছিলো যে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করায় সাহারা খাতুন নিজেই তাকে একবার পুলিশের কছে ধরিয়ে দিয়েছিলেন।  

মিনহাজ নিজেকে ডক্টর দাবি করে কিন্ত সে ডক্টর না। জিনিয়া-মিনহাজের অবৈধ টাকা বিদেশে পাচারেরও অভিযোগও রয়েছে। আশরাফুজ্জামান মিনহাজের ৯৬টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা নেওয়ার ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অ্যাকউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি। মিনহাজ উদ্দিন বেশীরভাগ সময়ে থাকেন বিভিন্ন সার্কিট হাউজে। সে জায়গা বুঝে একেক সময় একেকজনকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। 

যাদেরকে স্ত্রী পরিচয় দেয় তারা হলো জিনিয়া জিন্নাত, তাহমিনা আক্তার তিন্নি, জনৈক নারী জজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের এক সদস্য,  এবং বিদেশে থাকা এক নারীকে জায়গা বুঝে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। তবে এসব নারীদের মধ্যে জিনিয়া জিন্নাতই কেবল ওই ব্যক্তিকে মিনহাজ উদ্দিন নামে তার স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেন।  টাঙ্গাইলের সহকারী কমিশনার (ভূমি ) নাজমুল হাসানের কাছে জিনিয়া এমন দাবী করেছিলেন। জিনিয়া জিন্নাত ও ওই ব্যক্তি একাধিক নামে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহার করেন এমন অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন জিনিয়া। অভিযোগে আছে তার বাবা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাতে সহায়তা করেছেন এই প্রতারক জিনিয়ার কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন।  অভিযোগ আছে কোটায় চাকরী পেয়ে কথিত স্বামীকে নিয়ে মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন জিনিয়া। 

অভিযুক্ত মিনহাজ উদ্দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মিরওয়ারিশপুরের মো. হারুন অর রশিদের ছেলে। সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাতের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম রত্তন আলী শরীফ। রত্তন আলী শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করেন। কিন্ত অভিযোগে বলা হয়েছে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।  

দুদুকে দায়ের করা ১৩টি অভিযোগের প্রথমটিতে বলা হয়, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত। তিনি সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে তিনি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব। জিনিয়া জিন্নাতের বাবা রত্তন শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। শেখ হাসিনার দেওয়া বীর প্রতীক উপাধিতে তিনি ব্যবহার করেছেন করপোরাল পদ। গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি বিমানবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অবসরে গেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে। আবার অন্য এক গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে রত্তন শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করেছেন। নিজে মুক্তিযোদ্ধা বনেছেন। 

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একবার অনৈতিক সম্পর্কে ধারণ করা গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাবেক সহকারী কমিশনার ভূমি জিনিয়া জিন্নাত। অতি গোপনে গর্ভের সন্তান অপসারণ করার কারনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জিনিয়া।  টাঙ্গাইলের আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল গাইনি বিভাগে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত দুদিন চিকিৎসা নেন তিনি। এ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১২ আগস্ট থেকে  ৪ আগস্ট পর্যন্ত ২৪ দিন ছুটিতে থাকেন জিনিয়া  অবৈধ গর্ভপাত বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৩১২-৩১৬ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাতের পৃষ্ঠপোষকতায় তার স্বামী ম্যাজিস্ট্রেট সেজে অভিযান করতেন। গাড়ি জব্দ, জরিমানা ও চাঁদাবাজি করতেন। আর এসব অপকর্মে ব্যবহার করতেন সরকারি গাড়ি ও গানম্যান।  একবার দুটি গাড়ি জব্দ করেন দুলালপুর থেকে। সেগুলো আলাদা ড্রাইভার দিয়ে নিজের হেফাজতে নেন জিনিয়ার স্বামী মিনহাজ। বিষয়টি জানাজানি হলে জিনিয়া জিন্নাতকে শোকজও করা হয়েছিল। কিন্ত ফলাফল শূন্য। অন্যদিকে সেই কথিত স্বামী মিনহাজ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন। চালকদের পাঠিয়ে গাড়িতে বসে থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদা আদায় করতেন।  সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ঘুরতেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও ব্যক্তিগত গাড়ীতে জ্বালানি নিয়ে টাকা দিতেন না। ড্রাইভারকে বলতেন পাম্পের খাতায় স্বাক্ষর করে দিতে।  নেশা করার জন্য বারেও যেতেন মিনহাজ। এসব অপরাধে দ্বিমত করলে চালকদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অব্যাহতি দিতেন। 

চার নম্বরে অভিযোগে বলা হয়েছে, বেতন দেওয়ার পরিবর্তে অপরাধ জায়েজ করতে মিথ্যা অভিযোগে চালককে বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন জিনিয়া জিন্নাত। শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাত তার কথিত স্বামীর কথায় পৌরসভার সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভারকে বেতন ভাতা দিতেন না। বরং ড্রাইভারের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিতেন। এখনও রোবেল মিয়া নামে একজন চালক তার কাছে চার লাখের বেশি টাকা পায়। কথিত স্বামী পরিচয় দেয়া ব্যক্তির অপরাধ জায়েজ করতে রোবেল মিয়াকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেন জিনিয়া জিন্নাত। চাকরি ফিরে চাইকে গেলে চালককে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হয়।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, জিনিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে সরকারি গাড়ি ও প্রটোকল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতেন। খরচ নিতেন চালক ইদ্রিসের কাছ থেকে। পরে বেতন না দিয়েই সেই চালককে অপসারণ করা হয়। গাড়ির জ্বালানী এবং আনসার সদস্য ও তাদের যাবতীয় খরচ বহন করতে হতো চালককে। ওই চালককে নিয়ে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালীও গিয়েছিলেন কথিত স্বামীর সাথে। শেষপর্যন্ত বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে বের করেন দেন সেই চালককে। চালক মো. ইদ্রিস আলীও প্রায় দুই লাখের বেশী টাকা পাওনা। 

ছয় নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সরকারি গাড়ি মেরামতের টাকা ও জ্বালানি খরচের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো চালককে মিথ্যা কারণ দর্শানের নোটিশ দিয়ে চাকরীচ্যূত করেছেন জিনিয়া জিন্নাত। এমন অপকর্মের কলকাঠি নেড়েছেন কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন। সরকারি গাড়ির  পার্টস ও ইঞ্জিন নাড়া-চাড়া করে চালক রোবেল গাড়ি নষ্ট করেছে এমনসহ  অভিযোগে শোকজ করেন জিনিয়া জিন্নাত। পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি নিয়ে তিনি তাতে সই করাতেন চালক রোবেলকে দিয়ে। পরে সেই টাকাও পরিশোধ না করে চালকের ওপর দোষ চাপান। মিথ্যা মামলারও হুমকি দেন। পরে শোকজের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি ফেরত, ক্ষতিপূরণ এবং জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামীর শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা।

সাত নম্বর অভিযোগে বলা হয়, কোরবানির কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি কথিত স্বামী ও জিনিয়া জিন্নাত। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে কোরবানীর দিয়ে কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি তারা।  

আট নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাতের নির্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার স্বামী লোকজন নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির চেয়ার ব্যবহার করেছেন।  বসে খাবার গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি। জিনিয়া এক সময়  টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সহকারী কশিমনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  তার কথিত স্বামী গোপালপুর ভ্রমণে যাবেন।  এ কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার সকল বন্দোবস্ত করার জন্য আগেই জিনিয়া জিন্নাত নির্দেশ দেন তৎকালীন ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানকে। সাধারণ ব্যক্তি হয়েও কথিত স্বামী কমিশনারের জায়গায় বসে সবাইকে নিয়ে খাবার গ্রহণ ও ছবি তোলেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নাজমুল হাসান। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নয় নম্বরে বলা হয়, স্ত্রী ম্যাজিস্ট্রেট তাই স্ত্রীর সহায়তায় মামলা বাণিজ্য করেন কথিত স্বামী। নীরিহ মানুষের নাম মামলায় যুক্ত করে সেই মানুষকে মামলা থেকে বাঁচানোর নামে টাকা আদায় তার ব্যবসা। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অনেক মানুষকে হয়রানি করছেন তারা। নোয়াখালীতে নিজ নিজেদের এলাকার ১০ জনকে এমন মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। এমন কী নিজের বাবা হারুনুর রশিদকে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ও জিনিয়া জিন্নাত চক্র। 

১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজের জবাবসহ শাস্তি এড়াতে ডিসি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে নিজের বিরুদ্ধে শোকজের নথি সরিয়ে ফেলেছেন জিনিয়া জিন্নাত। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম ও সরকারি ফোন নিয়ে ভারতে ট্রেনিংয়ে যাওয়ার কারনে  তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। সেসব নোটিশ ও জবাব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১ জুন ২০২৩ তারিখে সরকারি মোবাইল ফোন নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন জিনিয়া। একারনে তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়েছিলো।  নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে তাকে এসব শোকজ করা হয়। 

১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী ঘুষ-দুর্নীতির অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা এতটা ভয়ঙ্কার ও দুর্নীতিবাজ ছিলেন যে জিনিয়া জিন্নাতের বদলীর খবরে নরসিংদীর শিবপুরের সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে। 

১২ নম্বর অভিযোগে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন নিজেকে কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রিসার্চার পরিচয় দেন। অথচ তার দেয়া তথ্যে দেখা যায়, তিনি রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে।  কিন্ত তিনি ওই ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন ২০১১ সাল থেকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী হওয়ার আগেই শিক্ষক বনে গেছেন মিনহাজ। 

অন্যদিকে, জিনিয়া জিন্নাতের বাবা রত্তন আলী শরীফ নিজেকে যুদ্ধাহত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেন। সেই পরিচয়ে সরকারি সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত নথিতে নামের মিল নেই। তার ৯টি নামের রকম দেখা যায়, (১) জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, (২) লাল মুক্তি বার্তায় তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীর প্রতীক (বিমান), (৩) খেতাবপ্রাপ্ত গেজেটে (গেজেট নং-৫৪১) তার নাম কর্পোরাল রতন শরীফ পুলিশ,  (৪) বিমান বাহিনী গেজেটে(গেজেট নং-৩৩৭) তার নাম ফ্লাঃ সাঃ রতন আলী শরীফ),  (৫) বিমান বাহিনীর বীর প্রতীকের তালিকায় তার নাম কর্পোরাল রতন শরীফ পুলিশ, (৬) ১৯৭৩ এর গেজেটে (গেজেটে সিরিয়াল নং-২৯১) তার নাম রতন শরীফ (৭) বেসামরিক গেজেটে (গেজেট নং-১৩২১) তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ (বীরপ্রতীক), (৮) বীরত্বভূষণ সনদে (সনদ নং-২৯১) তার নাম কর্পোর্যাাল রতন শরীফ, (৯) খেতাবপ্রাপ্ত আরেক তালিকায় তার নাম কর্পোরাল (অব:) রতন শরীফ লেখা। অর্থাৎ একই ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রীয় নথিতে আটভাবে লেখা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিতে তার পিতার নাম উল্লেখ নেই। এমন কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দাবী করা বীরত্বভূষণ সনদে তারিখও উল্লেখ নেই। নিজেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও তার চিকিৎসা সনদও পাওয়া যায়নি। এসব অসঙ্গতির পাশাপাশি অভিযোগ পাওয়া যায় ওই ব্যক্তি আসল রতন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা নয়। বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম ঠিকানা—মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, পিতা নুর মোহাম্মদ শরীফ, মাতা কদভানু, গ্রাম রাকুদিয়া, ডাকঘর রাকুদিয়া, থানা বাবুগঞ্জ, জেলা বরিশাল। এ বিষয়টি অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করেছেন জিনিয়া জিন্নাত। প্রথমে তিনি বলেন, আশরাফুজ্জামান মিনহাজ এ নামে কাউকে চেনেন না। ছবি দেখালে পরে স্বীকার করেন এই ব্যক্তি তার স্বামী। জিনিয়া জিন্নাতের স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেস্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। 

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত | দুদক