আর্কাইভ থেকে জনদুর্ভোগ

সাত জেলায় হঠাৎ লকডাউনে ভোগান্তিতে জনসাধারণ

সাত জেলায় হঠাৎ লকডাউনে ভোগান্তিতে জনসাধারণ
মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ও ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে আশপাশের ৭ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সকাল থেকেই এ সকল জেলায় কার্যকর হচ্ছে ৯ দিনের লকডাউন। তবে হঠাৎ লকডাউন ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। মানিকগঞ্জ। মঙ্গলবার (২২ জুন) সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলা শহরের ভাষা শহীদ রফিক সড়কে দু-একটি রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করছে। সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহন চলাচলে তদারকি করছে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন যানবাহন ও মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং অনেক যানবাহনকে ঢাকার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তবে মহাসড়কে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি, প্রাইভেটকার, দূরপাল্লার পরিবহন বাস, ট্রাক চলতে দেখা গেছে। লকডাউন উপেক্ষা করে অনেক মানুষকে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। সড়কে যানবাহন না থাকায় অনেকে হেঁটেই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশকে বাসস্ট্যান্ডে যানবাহন চলাচলে কঠোর নজরদারি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া জেলা শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হলে লাভলু মিয়া নামে একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, সাভারের একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। দুইদিন আগে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। লকডাউনের বিষয়টি না জানার কারণে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তবে চাকরি বাঁচাতে যেকোনোভাবে তাকে কর্মস্থলে যেতে হবে। আমেনা বেগম নামে একজন বলেন, মেয়ে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। হঠাৎ করে লকডাউনের খবর শুনে বিপাকে পড়েছি। ঢাকার লালবাগে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অপেক্ষা করছেন কয়েকজন। তারা বলেন, এখন কেমনে যামু? সকাল থেকে বসে আছি। কোনো গাড়ি চলতাছে না। এই লকডাউনের জন্য খুব ভোগান্তিতে পড়েছি। রামপ্রসাদ নামে এক রিকশাচালক বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। রিকশা নিয়ে বের হয়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা আয় হচ্ছে। এর মধ্যে আবার লকডাউন চলতাছে। কিভাবে যে পরিবারের লোকগুলোর মুখে খাবার তুলে দিব? বাধ্য হয়েই রিকশা নিয়ে বের হইছি। রিকশা না চালাইলে খামু কী? লকডাউন দিয়া করমু কী? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসে চাকরি করেন তিনি। লকডাউনের বিষয়টি জেনে তিনি মোটরসাইকেল রেখে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। ধামরাইয়ের মইশাসি থেকে অনেক কষ্টে মানিকগঞ্জের বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছেন। এখানে এসে আর কোনো যানবাহনই পাচ্ছেন না। এখন তার কর্মস্থলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দায়িত্বরত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন নিপা বলেন, সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পাটুরিয়ামুখী বেশ কয়েকটি গাড়িকে ঢাকার দিকে ফিরেয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাস্ক না পরার তিনজনকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ। লকডাউনের কারণে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে সব ধরনের লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এ রুটে ফেরি চলাচল করছে। অনেকে জেনে আবার অনেকে না জেনে ঘাটে এসে বিপাকে পড়ছেন। জরুরি কাজ থাকায় শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন মাদারীপুরের তৌহিদ ইসলাম। তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে শ্যামলী থেকে ভেঙে ভেঙে শিমুলিয়ায় এসেছেন। রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তল্লাশি করছে। পরে পুলিশকে বুঝিয়ে তিনি ঘাটে এসেছেন। শিমুলিয়া ঘাট এলাকা থেকে ঢাকা যাচ্ছেন নিরব আহমেদ নামে একজন। তিনি বলেন, ঘাটের একাধিক স্থানে পুলিশ পাহারায় রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে জরুরি প্রয়োজনে এক বড় ভাইয়ের প্রাইভেটকারে চড়ে ঢাকা যাচ্ছি। শ্রীনগর উপজেলার মহসড়কের পাশেও বিভিন্ন স্থানে পুলিশ টহল দিচ্ছে। দূরপাল্লার কোনো গাড়ি চলতে দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মো. সোলাইমান বলেন, শিমুলিয়া ঘাট থেকে সকল ধরনের স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঘাটে কোনো যাত্রীর চাপ নেই। তবে পণ্যবাহী কিছু পরিবহন ঘাটে রয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে মঙ্গলবার সকাল থেকে ১৪টি ফেরি চলছে। সকল ধরনের লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘাটে যাত্রীর চাপ নেই।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সাত | জেলায় | হঠাৎ | লকডাউনে | ভোগান্তিতে | জনসাধারণ