অপেক্ষা করতে শেখাটাও হতে পারে একটি দক্ষতা। নিশ্চয়ই ভ্রু কুচকে ভাবছেন, উপদেশ দেয়া সহজ, পাবলিক বাসে ঝুলে গরমে সিদ্ধ হয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় চলে গেলে বুঝতেন অপেক্ষা করা কি প্যারা!
‘অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়’। সত্যি কি তাই? চাকরির পরীক্ষার অপেক্ষমান তালিকায় নিজের নাম দেখলে সত্যিই তা আশাহত হওয়ার মতো বিষয়। আবার প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা বেশ মধুর আর রোমান্টিকও বটে। কিন্তু অপেক্ষারত সময়ের মাত্রা কমবেশির কারণে বদলে যেতে পারে আমাদের আবেগ, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সম্পর্ক।
মনোবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে যা বলেন...
অপেক্ষা কী
অপেক্ষা হচ্ছে নির্দিষ্ট বা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য! যেমন, আমি ১ ঘণ্টা যাবত বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি নির্দিষ্ট সময় ‘১ ঘণ্টা’ ধরে চলছে, হয়তো আর ১ ঘণ্টা পর এই অপেক্ষার অবসান হবে। অন্যদিকে, প্রতীক্ষা হচ্ছে দীর্ঘসময়ের জন্য এবং অনির্দিষ্ট।
কেনো আমরা স্বেচ্ছায় অপেক্ষা করি
সাধারণত আমরা কিছু পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করি। যেমন, ফসলের বীজ বুনি, চাষ করি, যত্ন নিই, শ্রম দিই। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে ফসল ঘরে তুলবো সেই আশায়।
অপেক্ষা করা কেনো শিখবো
কথায় আছে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’! একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা যে জিনিস সহজেই পেয়ে যাই তার মর্ম বুঝি না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ধৈর্য্য ধরে পরিশ্রম করে গেলে সফলতা আসবেই আর তাই অপেক্ষা করতে শেখা জরুরি। অপেক্ষা আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
আমাদের প্রতিটি আচরণই ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। তাই অপেক্ষারত অবস্থায় হিতাহিতজ্ঞান শূন্য আচরণ করলে তা আমাদের শিক্ষা, মান-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে।
অন্যদিকে, ধৈর্য্য ধরতে পারলে তা আমাদের বিষণ্নতা ও উদ্বেগ কমায়। ধৈর্য্য জীবনের সন্তুষ্টির সঙ্গে যুক্ত।
কীভাবে অপেক্ষা করবো
আজকাল আমরা কয়েক সেকেন্ড ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেই অস্থির হয়ে যাই, লোডশেডিং হলে কীভাবে কি করবো ভেবে অন্যের ওপর রেগে যাই। ধরুন, আপনি একটি লম্বা লাইনে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন আর আপনার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একটু ভেবে দেখুন, আপনার মেজাজ খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে, ঘাম হচ্ছে, হৃদকম্পন বেড়ে যাচ্ছে, কথা বলতে গেলে গলার স্বর উঁচুতে উঠে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে উদ্বেগ! অপেক্ষা করাটাকে যদি একটি সমস্যা হিসেবে ধরে নিই তাহলে প্রথমে নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে নিজেকে বোঝাতে হবে। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক সবকিছুর শেষ আছে। তাই এই লাইন যতই দীর্ঘ হোক এক সময় শেষ হবে। তবে লম্বা লাইনের কারণ এবং কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে খোঁজ খবর নিয়ে জানার চেষ্টা করতে হবে। এই ফাঁকে জরুরি ফোন কল এবং অন্যান্য সম্ভাব্য কাজগুলো করে নেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ অপেক্ষারত সময়টুকুও যেনো অর্থবহ হয়। কেননা বিশ্বাস করতে হবে যে, জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডই অমূল্য সম্পদ।
আজীবন অপেক্ষা নয়
একটি সুন্দর সকালের অপেক্ষায় আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে উঠি। কিন্তু আমি কি এক কাপ চা-এর জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করবো? নিশ্চয়ই না! ধরুন, আপনার প্রিয়জন কেউ দেশের বাইরে থেকে ফিরলে নির্দিষ্ট কোনো আয়োজন হবে। সেই অপেক্ষায় আছেন। তার ফিরে আশার সময়টা এতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে যে, আপনি আর অপেক্ষা করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে অপেক্ষারত অবস্থায় মন পরিবর্তন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার ও কাছের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করুন। জীবনের সিদ্ধান্তগুলো আবেগ এবং যুক্তির যথার্থ সংমিশ্রণে নিন। জীবন যাতে সুন্দর হয় সে চেষ্টাই করতে হবে।
অপেক্ষা কষ্টের হলেও তা অনুশীলন করা প্রয়োজন। সফলতা অনিবার্য। ‘আমার এখনই চাই’ এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন।