নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৫৪ কিলোমিটার বেহাল সড়কে ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ৮০ গ্রামের মানুষ। গেলো কয়েক বছর ধরে সড়কের বেহাল দশা হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এই সড়ক যোগে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বড় বড় গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে অটোরিকশা থেকে শুরু করে বেবিট্যাক্সি ও ট্রাক বাসও। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া থেকে দাউদপুর হয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত এ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এছাড়া ফজুর বাড়ীর মোড় হতে ইছাপুরা বাজার পর্যন্ত এবং ইছাপুরা হয়ে ৩'শ ফিট সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। মুড়াপাড়া থেকে ভুলতা ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংযোগ সড়ক ৫ কিলোমিটার। ইছাখালী হতে নগরপাড়া পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার। ভুলতা গোলচত্বর থেকে আমলাবো পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার, গোলাকান্দাইল থেকে ডহরগাঁও পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার, কালনি বাজার তেকে বেলদি বাজার সড়ক ৫ কিলোমিটার, বরপা থেকে সুতালাড়া সড়ক ৬ কিলোমিটার। কাঞ্চন মায়ারবাড়ি থেকে বিরাব বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার। বিরাব নদীরঘাট থেকে করাটিয়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার।
আর এই সড়ক দিয়ে রূপগঞ্জ, ফজর বাড়ী, সাহাপুর, জাহাঙ্গীর পিতলগঞ্জ ব্রাম্মনগাও, শিমুলিয়া, দেবোই, ইছাপুরা, বাগবের, মুশুরি, নগর পাড়া, ইছাখালি, খামারপাড়া, দেলপাড়া, উত্তরপাড়া, বাগবাড়ী, নয়ামাটি, চাঁন খালি, নবগ্রাম, টিনর, ভিংরাব, হারিন্দা, ভুলতা, পাড়াাগাঁও, ভায়লা, মর্তুজাবাদ, হাটাবো, মাসুমাবাদ, মঙ্গলকালী, আমলাবো, শিংলাবো, কালি, গোলাকান্দাইল, ডহরগাঁও, কালনি, বেলদি, বরপা, সুতালাড়াসহ প্রায় ৭০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে থাকে।
গেলো কয়েক বছর আগেও উল্লেখিত রাস্তাগুলো অনেক সুন্দর এবং চলাচল উপযোগী ছিল। ছিলনা ভাঙ্গাচুর ও ধুলাবালি। পূর্বাচল উপশহর, আশপাশে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প, রেডিমিক্স কারখানা ও বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত লোডবাহি বালু, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালামাল বহনকারী গাড়ী চলাচলের কারণে সড়ক গুলো দেবে গিয়ে বড় বড় ভাঙ্গা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে সড়ক দেবে গেছে।
এসব বেহাল সড়কের ধুলা বালিতে পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বৃহত্তর পাইকারি কাপড়ের বাজার গাউছিয়া ও রূপগঞ্জ থানায় আসতে গিয়ে এই ভাঙ্গা এবং বেহাল সড়ক দিয়ে আসতে হয়। এছাড়া শিল্প কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তা ব্যবহার করে কর্মস্থলে যায়। বেহাল সড়কে চলাচল করতে গিয়ে শুধু গ্রামের মানুষই ভোগান্তিতে পড়ে না। উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ,সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভোগান্তিতে পড়েন। এলাকায় কোন প্রকার আইনশৃংখলার অবনতির ঘটনা ঘটলে রাস্তা বেহাল ও ভাঙ্গার কারণে থানা পুলিশ বা আইনশৃংখলা বাহিনী সময় মত ঘটনাস্থলে পৌঁছুতে পারে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জোরালো ভুমিকা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
নগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল্লাহ গাজী বলেন, ইছাখালি হতে নগরপাড়া রাস্তাসহ অন্যান্য রাস্তাগুলো এখন একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় সময় এলাকার লোকজন বড় বড় গর্তে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। সামনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
দেইলপাড়া এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি সড়ক কেটে বালুর পাইপ বসিয়ে গাজী বাইপাস সড়কে বড় বড় গর্ত করে ফেলেছে যার ফলে এ সড়কটি এখন প্রায় চলাফেরার অউপযোগি হয়ে পরেছে।
জাঙ্গীর এলাকার আসাদ গাজী বলেন, আমাদের চনপাড়া কালীগঞ্জ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। পুরো সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্ত হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্কুল-কলেজে পড়–য়া ছেলে মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে।
ভূলতা পাড়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ বলেন, মুড়াপাড়া ও ভুলতা সড়কের দুই পাশে অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবস্থিত আর এ সড়কটির সব চেয়ে বেশি বেহাল দশা। এখানে বর্ষাকালে পানি জমে পুকুরে পরিণত হয় এবং গরমকালে ধুলোর রাজ্যে পরিনত হয়। দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
মুশুরী এলাকার জয়নাল হাজারী বলেন, আমাদের বাড়ীর পাশেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সড়ক বেহাল দসার কারণে রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে অনেক কষ্ট হয়। রাস্তা বেহাল দশার কারণে অনেক রোগী এই হাসপাতাল আসতে পারেনা। তিনিও সড়ক গুলো সংস্কারের দাবি জানান।
রুপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সাহেদ বলেন, কোন জায়গায় ঘটনা ঘটলে ভাঙা রাস্তার কারণে সময় মত ঘটনাস্থল পৌঁছাতে পারছে না পুলিশ। দ্রুত সড়ক গুলো সংস্কার করা হলে সকলেরই উপকার হবে। এ বিষয়ে উপজেলার এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বায়ান্ন টিভি কে বলেন, চনপাড়া-কালীগঞ্জ সড়ক ও ফজুরবাড়ীর মোর-ইছাপুরা সড়কটি সংস্কারের বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য ফাইলটি মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন আসলেই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে।
এছাড়া ভুলতা মুড়াপাড়া সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন । এলজিইডিকে দিলে আমরা সড়কের কাজ করতে পারব। এছাড়া এলজিইডির অন্যান্য রাস্তা গুলোর সংস্কার কাজ অতি দ্রুত শুরু করা হবে।